বলিউডে নারী স্বাধীনতার গল্প বলতে গিয়ে যেন বারবার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হয়। রাশমিকা মান্দানার নতুন ছবি ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’ও তার ব্যতিক্রম নয়। নারী ক্ষমতায়নের গল্প বলার কথা ছিল এই সিনেমার। কিন্তু ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ট্রেলারে দেখা যায়, এক তরুণী বিষাক্ত চরিত্রের প্রেমিকের বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এটাই কি ক্ষমতায়ন? কেবল সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে আসা কি নারীর মুক্তির প্রতীক হতে পারে? তবে এ ধরনের ছবিকে কেন নারীর শক্তি বা ক্ষমতায়নের গল্প বলে প্রচার করা হয়, সেই প্রশ্ন উঠছে।
ছবিটি মুক্তির পর ভালো দর্শক টানছে। তবে ভালো রিভিউ আসেনি। ভারতের অনেক গণমাধ্যম ছবিটির নেতিবাচক রিভিউ দিয়েছে। এতে নারীর ক্ষমতায়নের নামে দেখানো হয়েছে ভন্ডামি, এমন দাবিও করছেন অনেকে।
তাদের মতে, ভারতে প্রতি কয়েক মাস পরপরই আসে তথাকথিত ‘নারীবাদী’ সিনেমা। গল্প একই। মেয়ে প্রেমে পড়ে, প্রেমিক বিষাক্ত হয়, মেয়েটি কাঁদে, চুল ছোট করে, সম্পর্ক ভেঙে চলে যায় এবং শেষে সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে হাসে। তারপরই ঘোষণা, ‘এই তো নারীশক্তি!’
কিন্তু এ তো আসলে পুরোনো গল্পের পুনরাবৃত্তি। ক্ষমতায়ন মানে পালিয়ে যাওয়া নয়, নিজের জীবন নিজের মতো করে গড়ে তোলা। ভারতের সিনেমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হৃদয়ভাঙার গল্প বিক্রি হয় সহজে। তাই সেই আদলেই বারবার নারীর শক্তি দেখানোর চেষ্টা চলে।
নারীর ক্ষমতায়ন মানে সে কাকে ছেড়ে গেছে তা দেখানো নয় বরং সে কেমন মানুষ হয়েছে সেটাই আসল কথা।
যে মেয়ে গভীর রাতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়, ভাগ্য বদলের চেষ্টা করে, পরিবার ও সমাজকে কিছু দিতে চায়, কোনো পুরুষের প্রশংসার জন্য নয় নিজের স্বপ্নের জন্য বেঁচে থাকার লড়াই করে সেই মেয়ে নারীর শক্তির উদাহরণ হতে পারে।
রাশমিকার দ্য গার্লফ্রেন্ড হতে পারত নতুন দিগন্তের সূচনা। কিন্তু তা হয়ে উঠেছে পুরোনো পোশাকে নতুন একটি ছবি মাত্র। যেখানে নারীর স্বাধীনতা মানে সম্পর্কভঙ্গ, উন্নয়ন নয়।
এতকিছুর পরও ছবিটি মুক্তির মাত্র ছয় দিনের মাথায় পেরিয়ে গেছে ১০ কোটি রুপির মাইলফলক। রাহুল রবীন্দ্রনের পরিচালনায় তৈরি এই তেলেগু রোমান্টিক নাটকটি আধুনিক প্রেমের জটিলতা ও বাস্তব সম্পর্কের টানাপোড়েনকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে।
প্রথম পাঁচ দিনেই আয় ছিল ৮ কোটি ৮৫ লাখ রুপি। ষষ্ঠ দিনে ছবিটির আয় ১ কোটি ২৫ লাখ রুপির মতো। তেলেগু ভাষার বাজারে গড় উপস্থিতি ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। সন্ধ্যা ও রাতের শোগুলোয় দর্শক উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
রাশমিকা অভিনীত ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’-এ আরও রয়েছেন দীক্ষিত শেঠি, অনু ইমানুয়েল, রাও রমেশ ও রোহিনি। গল্পে দেখা যায়, এমএ পড়ুয়া ভূমা (রাশমিকা) ও বিক্রমের (দীক্ষিত শেঠি) প্রেম কাহিনি। সম্পর্কের জটিলতা, আত্মঅন্বেষণ ও মানসিক গভীরতার দিকগুলো ফুটে উঠেছে গল্পে।
সমালোচকরা বলছেন, ছবিটি আধুনিক প্রেমের বাস্তবতা ও নিয়ন্ত্রণের নামে ভালোবাসার ভেতর লুকিয়ে থাকা আবেগের দিকটি অনাবৃত করেছে। এতে তুলে ধরা হয়েছে নারীর আত্ম-উপলব্ধির যাত্রা।
আরপি/এসএন