বিদেশি দক্ষ কর্মী ও গবেষক আনতে বিশেষ মার্কিন ভিসা প্রকল্প এইচ-১বি ভিসার ফি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির পর এবার এই ভিসা প্রকল্প বাতিল করতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসে এ সংক্রান্ত একটি বিলও জমা পড়েছে।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) সদস্য মার্জোরি টেইলর গ্রিন গতকাল বৃহস্পতিবার বিলটি উত্থাপন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের এই জনপ্রতিনিধি কট্টর ডানপন্থি এবং অভিবাসনবিরোধী হিসেবে পরিচিত।
প্রতিনিধি পরিষদে বিল জমা দেওয়ার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি ভিডিওবার্তা শেয়ার করেন মার্জোরি। সেখানে তিনি বলেন, “এইচ-১বি ভিসা বাতিল করতে আমি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে একটি বিল জমা দিয়েছি। প্রতারণা এবং অপব্যবহারে পরিপূর্ণ এই ভিসার কারণে দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীরা গুরুতর বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এই ভিসার সুযোগ নিয়ে এতদিন বড় বড় টেক এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স জায়ান্ট কোম্পানি, হাসাপাতাল ও বিভিন্ন শিল্পকারখানা আমাদের নাগরিকদের বঞ্চিত করে বিদেশিদের চাকরি দিয়েছে।”
“বিলটি পাস হলে দুর্নীতিগ্রস্ত এইচ-১বি ভিসা বাতিল হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশলী, ম্যানুফ্যাকচারিংসহ সব খাতে মার্কিনীরা অগ্রাধিকার পাবে।”
“মার্কিনীরা বিশ্বের সেরা মেধাবী জাতি। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রতি আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। আমি শুধু মার্কিনিদের স্বার্থ দেখব এবং আমেরিকানদের সবসময় সামনে রাখব। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে যদি আমরা দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে চাই, তাদেরকে দেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখাতে চাই— তাহলে এইচ-১বি ভিসা আমাদের বাতিল করতে হবে।”
এইচ-ওয়ান বি একটি বিশেষ ভিসা কর্মসূচি, যার আওতায় মার্কিন কোম্পানিগুলো অস্থায়ীভাবে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি বা প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর ৮৫ হাজার বিদেশি কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
মূলত বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল বিদ্যা এবং ব্যাবসায় প্রশাসনে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয় এ ভিসার আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য বলছে, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল, গুগল প্রভৃতি কোম্পানিগুলো এই ভিসা কর্মসূচির সবচেয়ে বড় লাভবান বা সুবিধাভোগী। শত শত বিদেশি কর্মী এসব কোম্পানিতে কাজ করেন।
বিশ্বের যেসব দেশ এই ভিসা কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে, সেসবের মধ্যে শীর্ষে আছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে যে হাজার হাজার ভারতীয় কর্মী কাজ করেন, তাদের একটি বড় অংশই এসেছেন এইচ-১বি ভিসায়।
এই ভিসার আরও একটি সুবিধা ছিল নাগরিকত্বের সুযোগ। এইচ-১বি ভিসাধারীদের স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য সহজেই অনুমতি পেয়ে যান। আর স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি প্রাপ্তির ৫ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলে তা-ও মঞ্জুর করে যুক্তরাষ্ট্র।
এতদিন এই প্রোগ্রামে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোকে ভিসা ফি বাবদ প্রতি বছর ১ হাজার ৫০০ ডলার ফি দিতে হতো। তবে গত সেপ্টেম্বরে এই ফি বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করে ট্রাম্প প্রশাসন।
ভিডিওবার্তায় মার্জোরি টেইলর গ্রিন অবশ্য জানিয়েছেন, তার বিলে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ পুরোপুরি বাতিলের সুপারিশ করা হয়নি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিদেশি ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে বিলে। বিলে বলা আছে, মার্কিন স্বাস্থ্যখাতে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ১০ হাজার বিদেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নেওযা হবে। তবে এতদিন এই ভিসার মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির যে সুযোগ ছিল, সেটি থাকবে না।
অর্থাৎ বিলটি যদি পাস হয়, তাহলে যেসব বিদেশি ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি পেলেও নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
টিজে/টিকে