জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে ড্রাম থেকে রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার বন্ধু জরেজুল ইসলাম ও প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও ডিবি। র্যাব জানিয়েছে, হত্যার পর একই ঘরে লাশ নিয়ে রাত্রিযাপন করেন জরেজ এবং শামীমা।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর কাওরানবাজার মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন। তিনি জানান, শামীমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিরআখড়া এলাকা থেকে আশরাফুলের পায়জামা, পাঞ্জাবি, রক্তমাখা দড়ি, চাপাতিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। তার মোবাইল থেকেও বেশ কিছু ভিডিও ও ছবি জব্দ করা হয়েছে।
ঢাকায় ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে হত্যা ও তাঁর মরদেহ ২৬ টুকরো করে ফেলার ঘটনায় নৃশংস ঘটনার চাঞ্চল্যকর বিস্তারিত প্রকাশ করে র্যাব জানায়, আটক শামীমা আক্তার ও তার প্রেমিক জরেজুল ইসলাম এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্পর্কে ছিলেন বলে জবানবন্দিতে শামীমা জানান। জরেজুল তাকে আশ্বস্ত করেন যে তার এক বন্ধুকে প্রেমের সম্পর্কের কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে।
পরিকল্পনা অনুসারে, শামীমা গত একমাস ধরে আশরাফুল হকের সঙ্গে নিয়মিত অডিও–ভিডিও কলে যোগাযোগ করে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেন।১১ নভেম্বর রাতে ঢাকায় পৌঁছে শনিরআখড়ার নূরপুর এলাকার একটি বাসা ভাড়া নেন দুজন। বাসায় ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশ্যে আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করানো হয়। তিনি অচেতন হওয়ার পর জরেজুল বাইরে থেকে শামীমা ও আশরাফুলের অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করেন।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক ফায়েজুল আরেফীন বলেন, শামীমার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, পরদিন দুপুরে আশরাফুল সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে পড়লে জরেজুল তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মুখে কসটেপ লাগিয়ে দেয়। এরপর ইয়াবা সেবনের উত্তেজনায় হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে হত্যা করে। হত্যার পর জরেজুল বাজার থেকে চাপাতি ও দুটি ড্রাম কিনে এনে মরদেহ ২৬ টুকরো করে ড্রামে ভরে। ১৩ নভেম্বর সকালে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রামগুলো বাসা থেকে বের করেন। হাইকোর্ট সংলগ্ন এলাকায় ড্রাম দুটি ফেলে দ্রুত পালিয়ে যান।
ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুজনকে অটোরিকশাযোগে সায়দাবাদের দিকে যেতে। এরপর জরেজুল শামীমাকে কুমিল্লায় যেতে বলেন। শামীমা কুমিল্লায় চলে গেলে তার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন জরেজুল। ডিবির তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা থেকে জরেজুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, হত্যার পেছনে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায়ের উদ্দেশ্য থাকলেও ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয় আছে কি না-তা জরেজুলকে জিজ্ঞাসাবাদে পরিষ্কার হবে। শামীমাকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য শাহবাগ থানায় হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে।
টিজে/টিএ