গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার সম্মুখীন হয়েছে ইরান। আর এই খরা মোকাবিলায় মেঘের মধ্যে রাসায়নিক ছড়িয়ে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ঝরানোর উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি।
রোববার (১৬ নভেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনা জানিয়েছে, গত শনিবার উর্মিয়া লেক অঞ্চলের আকাশে এই ক্লাউড সিডিং কার্যক্রম চালানো হয়। ইরানের বৃহত্তম এই হ্রদটি এখন প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে গিয়ে লবণের বিশাল প্রান্তরে পরিণত হয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, পরবর্তী সময়ে পূর্ব আজারবাইজান ও পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশেও এ ধরনের অভিযান চালানো হবে।
বিবিসি বলছে, ইরানে বৃষ্টিপাত রেকর্ড কম পর্যায়ে নেমে এসেছে, আর জলাধারগুলোও প্রায় খালি হয়ে পড়েছে। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করে বলেন, শিগগিরই পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে তেহরানে পানি সরবরাহ রেশনিং করতে হতে পারে, এমনকি রাজধানী থেকে মানুষ সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনও দেখা দিতে পারে।
মূলত ক্লাউড সিডিং বলতে আকাশে থাকা মেঘে বিমান বা ভূপৃষ্ঠভিত্তিক জেনারেটরের মাধ্যমে সিলভার বা পটাসিয়াম আয়োডাইডসহ বিভিন্ন রাসায়নিক ছড়ানোকে বোঝায়। এতে জলীয়বাষ্প দ্রুত ঘনীভূত হয়ে মেঘকে বৃষ্টিতে রূপ নিতে সহায়তা করে।
দশকের পর দশক ধরে এই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংযুক্ত আরব আমিরাতও পানি সংকট মোকাবিলায় এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করেছে।
ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর দীর্ঘমেয়াদি গড়ের তুলনায় ইরানে বৃষ্টিপাত কমেছে প্রায় ৮৯ শতাংশ। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দেশটি বর্তমানে গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শুষ্ক শরৎকাল পার করছে।
এদিকে খরার মধ্যে পানি অপচয় কমাতে সরকার অতিরিক্ত পানি ব্যবহারকারী পরিবার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর জরিমানার পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে।
ইরানের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট অ্যান্ড ড্রট ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের প্রধান আহমাদ ভাজিফেহ বলেন, তেহরান, পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান ও মার্কাজি প্রদেশের বিভিন্ন বাঁধে পানির পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা “উদ্বেগজনক”।
এমন অবস্থায় গত শুক্রবার তেহরানের একটি মসজিদে শত শত মানুষ বৃষ্টির জন্য বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন। পরদিন শনিবার ইরানি আবহাওয়াবিদরা জানান, দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এমনকি তেহরানের উত্তরে একটি স্কি রিসোর্টে এ বছর প্রথম তুষারপাতও দেখা গেছে।
এবি/টিকে