ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের রায় পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
গতকাল সোমবার ঢাকায় এনসিপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায়কে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে এই রায় কার্যকর করতে হবে।’
অবিলম্বে দিল্লি থেকে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনতে হবে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যথাযথ ভূমিকা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আমরা শুনেছি যে সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারত সফর করছেন। আমরা আশা করব এবং দাবি জানাব যে তিনি শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শুধু শেখ হাসিনা নয়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ও আমরা কার্যকর চাই। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সব ফ্যাসিস্ট, তাদের দোসর এবং যেসব সরকারি কর্মকর্তা অভিযুক্ত, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদেরও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এই যে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরবর্তী মামলাগুলোর রায় দিতে হবে এবং তা কার্যকর করতে হবে। যাঁরা জেলে আছেন, আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁদের রায় কার্যকর হোক।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘যেদিন আমাদের ভাই আবু সাঈদ শহীদ হয়েছিলেন, সেদিন আমরা শপথ নিয়েছিলাম যে এই হত্যার বিচার আদায় করেই ছাড়ব। জুলাই বিপ্লবে হাজারো শহীদ এবং কয়েক হাজার আহতের ওপর যে জুলুম করা হয়েছিল, সেই জুলুমের রায় আমরা আজকে পেয়েছি।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ দেশের সাধারণ মানুষের ওপর যে জুলুম-নির্যাতন করেছিল, গুম, খুন, মানবাধিকার হরণসহ পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা ও জুলাইয়ের গণহত্যা করেছিল- এ সবকিছুর বিচারের রায় আমরা পেয়েছি। আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। এ দেশের বিচারিক ইতিহাসে এই রায় একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা শুধু এই রায় পেয়েই সন্তুষ্ট নই; আমরা সেদিনই সন্তুষ্ট হব, যেদিন এই রায় কার্যকর করা হবে। আমরা যেদিন আমাদের জীবদ্দশায় শুনতে পাব যে শেখ হাসিনাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করা হয়েছে, সেদিনই আমরা শান্তি পাব। সেদিনই জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে, শহীদ পরিবার ও আহতরা শান্তি পাবেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় কার্যকর করার দাবি জানাই।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, বরং জুলাই-আগস্টের ভিকটিম হিসেবে বিচারের রায় এবং তা কার্যকর দেখতে চাই। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আজকের রায়ে ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে এই রায়ের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে শেখ হাসিনা শুধু ব্যক্তি হিসেবে নন, বরং দল ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই গণহত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী ছিলেন। ফলে আওয়ামী লীগও দল হিসেবে এই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত।’
এ সময় নাহিদ ইসলাম দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার শুরু করার দাবি জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাজসাক্ষী হলেও এই গণহত্যার পেছনে সাবেক আইজিপির হাত রয়েছে। তাই তাঁর পাঁচ বছরের সাজায় আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা মনে করি, রাজসাক্ষী হলেও তাঁর সাজা আরো বেশি হওয়া উচিত ছিল।’
কেএন/টিকে