রাজধানী ঢাকায় শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত শক্তিশালী ভূমিকম্পে সাধারণ মানুষের মতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকারাও। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এই কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল নরসিংদী।
এই ভূমিকম্পের তীব্রতা টের পেয়েছেন ঢাকায় অবস্থানরত প্রায় সকলেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারকারাও শেয়ার করেছেন সেই মুহূর্তের অভিজ্ঞতা। তাদের অনেকের বর্ণনায় উঠে এসেছে ওই সময়ের ভয়াবহতা ও অসহায় পরিস্থিতি। সেই সাথে সৃষ্টিকর্তার কাছে তারা প্রার্থনা করছেন, সবাই যেন নিরাপদে থাকে-
চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ফেসবুকে লিখেন,“এমন ভূমিকম্প আগে কখনো হয়নি! এটা হয়তো শেষ দিন হতে পারতো। সবকিছু কতটা ভঙ্গুর তার একটি অনুস্মারক যেন এই ভূমিকম্প!”
ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা জানিয়ে অভিনেতা ফারুক আহমেদ লিখেন,“আমি থাকি ১৪ তলা বিল্ডিংয়ের ৫ম তলায়। নাস্তা খেয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনি। সমস্ত বিল্ডিং কাঁপছে। জানালা দিয়ে দেখলাম পাশের বিল্ডিং দোলনার মত দুলছে। মানুষজন চিৎকার করছে। আমরা রুমের আড়ার নিচে দাঁড়ালাম। মনে হচ্ছিলো পুরা ইমারত ভেঙে পড়বে। আমার দীর্ঘ জীবনে ভূমিকম্পের কম্পন বহুবার অনুভব করেছি। এমন তীব্রতা কখনও অনুভব করিনি। সবাই ভালো থাকুন।”
অভিনেত্রী দীপা খন্দকার নিজের একটি ছবি পোস্ট করে লিখেন,“আজ ভূমিকম্পে আমি নিজেকে আরো ঠিক করে বুঝলাম, আমার মাথা কি ঠাণ্ডা নাকি মৃত্যুর জন্য তৈরি সবসময়?”
কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর লিখেন,“জন্ম থেকে দেখছি ,দুই দিনের দুনিয়ায় মানুষ শুধু মানুষকেই পিষে মেরে গেলো। সবাই একটু মনুষ্যত্ব জাগাই, সচেতন হই, বিপদ থেকে শিক্ষা নেই। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত করুন, মাফ করুন। ধ্বংস বা মৃত্যুর মুখোমুখি যদিও কারো কিছুই মনে থাকবে না, এরপরেও বলি জানা অজানায় কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মাফ করবেন। জানি আমরা বদলাবো না, ঘরে বাইরে একে অপরের ক্ষতির নীল নকশা আঁকতে থাকবো, তবুও দোয়া করি সবার বোধোদয় হোক, সবাই নিরাপদ থাকুন। আল্লাহু আকবার।”
অভিনেতা সজল লিখেছেন, “এটা কি? ভূমিকম্প!! এটা কি দেখলাম!! আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।”
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চিত্রনায়ক রোশান লিখেন,“আজকের ভূমিকম্প আবারও মনে করিয়ে দি-এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, আর প্রকৃত নিরাপত্তা কেবল আল্লাহর কাছেই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর হেফাজতে রাখুন।” পরে একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে এই নায়ক লিখেন,“আমাদের ঢাকাতে ভূমিকম্পে তিনজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেল। মৃত্যু ভয় খুব কাছ থেকে হাতছানি দিয়েছে আজ। মহান আল্লাহ তাআলার দুর্যোগের কাছে আমরা মানুষ কতই না তুচ্ছ এবং নগণ্য। হে আল্লাহ এই মানুষগুলোকে আপনি জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।”
ছোটপর্দার অভিনেত্রী পারসা ইভানা লিখেন, “ভূমিকম্পে প্রথমবার এতটা ভয় পেলাম… একা , তাই আরও অস্থির লাগছে। আমরা কতটা অসহায় প্রকৃতির সামনে। আল্লাহ মহান।”
সেরাকণ্ঠ খ্যাত সংগীতশিল্পী ইমরান মাহমুদুল তাৎক্ষণিক এক পোস্টে লিখেন,“আল্লাহ, লাইফে এতো বড় ভূমিকম্প প্রথমবার ফিল করলাম। সবাইকে নিরাপদ রাখো আল্লাহ।” পরে আরেক পোস্টে তিনি লিখেন, “ভূমিকম্প উৎপত্তি স্থল বাংলাদেশে এটাই কি প্রথম ? না . ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে প্রথম হয়েছিল । যদিও তখন বাংলাদেশ জন্ম হয়নাই। কিন্তু এত বড় ইমপ্যাক্ট সহ ভূমিকম্প আমার মনে হয় এটাই প্রথম।”
নাটকের অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান লিখেন, শুক্রবারের ভূমিকম্প আমাদের দুর্বলতা এবং আল্লাহর কুদরত স্মরণ করিয়ে দিল। হে আল্লাহ, আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন, এবং প্রতিটি ভীতিকর হৃদয়ে শান্তি দান করুন। আমিন।
কণ্ঠশিল্পী পড়শি লিখেন, আমরা প্রস্তুত তো? আজকের ভূমিকম্পে কয়েক সেকেন্ডের কম্পনই মনে করিয়ে দিল-একটা বড় ঝাঁকুনিতে আমরা কতটা অসহায় হয়ে যেতে পারি। ভাবতেই ভয় লাগে… এই কম্পনটা যদি আরও ১০-১৫ সেকেন্ড স্থায়ী হতো ! বিশেষজ্ঞ এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর অনেক দিন ধরেই সতর্ক করে আসছে-বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্প-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তবুও প্রশ্ন রয়ে যায়-প্রস্তুতি কোথায়? আমরা কি সত্যিই বড় বিপদ মোকাবিলার মতো প্রস্তুত? ভবনের মান, মানুষের নিরাপত্তা, উদ্ধার ব্যবস্থা-সবকিছু কি ঠিক আছে? বাংলাদেশ কি প্রস্তুত? আল্লাহ আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখুন।
অভিনেত্রী রোকাইয়া জাহান চমক লিখেন,“দুর্যোগ আমাদের হাতে নেই, ভূমিকম্প আমরা থামাতে পারব না। কিন্তু প্রস্তুতি আমাদের হাতে ছিল। সেই প্রস্তুতি আমরা নিইনি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মও কি এই ভুলের শিকার হবে? আমাদের এই উন্নয়নের নামে অন্ধ দৌড়, লোভ, এবং দায়িত্বহীনতার বড় মাশুল একদিন না একদিন দিতেই হবে। প্রকৃতি ভুল কখনো ভুলে যায় না, সময় হলে সেটার মূল্য সে আদায় করেই নেয়।”
এছাড়া বিদ্যা সিনহা মিম, মেহজাবীন চৌধুরী, নিলয় আলমগীর, চিত্রনায়ক নিরব, তৌসিফ মাহবুব, কাজল আরেফিন অমি, জিয়াউল হক পলাশসহ বহু তারকা ভূমিকম্পে যেন সবাই নিরাপদ থাকে, সেই প্রার্থনা কামনা করেছেন।
টিজে/টিকে