খ্যাতি আমার জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে: এ আর রহমান

বিশ্বখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। ভারতীয় সংগীতে এক উজ্জ্বল নাম। ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ সিনেমায় সুর দিয়ে জয় করেছেন বিশ্ব। দীর্ঘ সংগীত জীবনে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য গান। ব্যক্তিগত জীবনে এই সংগীতগুরু দীর্ঘ ২৯ বছর কাটিয়েছেন স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে। তবে গত বছর হঠাৎ তারা বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। যদিও বিচ্ছেদের কারণ প্রকাশ্যে আনেননি রহমান বা সায়রা। সম্পর্ক ভাঙার পরও স্বামী সম্পর্কে কুকথা শুনতে নারাজ সায়রা বানু।

তিনি জানান, ব্যক্তিগত সম্পর্ক যাই থাকুক, রহমানের প্রতি মানুষের সম্মান তার কাছে অটুট।

এই সম্পর্ক ভাঙার পর একটি বিষয় সামনে এসেছে- খ্যাতির বোঝা রহমানের ব্যক্তিগত জীবনে ভীষণ চাপ সৃষ্টি করেছে। গায়কের কথায়, ‘চেন্নাইতে থাকা ও খ্যাতি-দুটোই আমার জীবন বদলে দিয়েছে।’



সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রহমান জানান, চেন্নাইতে থেকে জীবন পরিচালনা করা যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তবে ততটা নয়। খ্যাতি যেমন জনপ্রিয়তা দিয়েছে, তেমনই কেড়ে নিয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাপনের স্বাধীনতা।

রহমান বলেন, ‘চাইলেই বিদেশে গিয়ে থাকতে পারতাম। কিন্তু আমি কখনো চেন্নাই ছাড়িনি। এখানেই থেকেছি। কিন্তু এখানকার মানুষ আমাকে এত ভালোবাসেন যে ব্যক্তিগত জায়গাটা প্রায় হারিয়ে ফেলেছি।’

খ্যাতির কারণে ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো কেমন বাধাগ্রস্ত হয়, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রহমান বলেন, ‘আমি খুব একটা বাইরে বের হই না। বের হলেই ছবি তোলার অনুরোধে পড়তে হয়। এমনকি ভ্রমণে থাকলেও মানুষ বুঝতে চায় না। বিমানবন্দরে, পথে-সবার লক্ষ্য থাকে ছবি তোলা।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো বিয়েবাড়িতে খেতে গেলেও একই দৃশ্য। আমি হয়তো প্লেট হাতে বসেছি, ঠিক তখনই লোকজন ছুটে আসে ছবি তুলতে। আমি বললেও কথা শোনে না। কারণ তাদের কাছে সেই ছবিটা খুব জরুরি। তাই এখন আর বিয়ের দাওয়াতে খেতে যাই না।’

সংগীতগুরু মনে করেন, জনপ্রিয়তার মূল্য অনেক বড়। ‘খ্যাতি আমার জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। কিছু জায়গায় স্বাধীনতা বলতে কিছুই আর নেই’ বললেন রহমান।
বিদেশের পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভিন্ন বলে মনে করেন এ আর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিদেশে গেলে কেউ এমনভাবে বিরক্ত করেন না। ন্যূনতম ব্যক্তিগত পরিসরটা মানুষ সম্মান করে। কিন্তু দেশে জনমুখী হওয়াটাই যেন এক ধরনের চ্যালেঞ্জ।’

তবুও তিনি দেশ ছাড়ার কথা কখনো ভাবেননি। সংগীত বিশ্বের এই মহাতারকার কথায়, ‘সবকিছু সত্ত্বেও এখানেই থেকেছি, এখানেই কাজ করেছি। আমার মাটির প্রতি টান আমাকে দেশে ধরে রেখেছে।’

বিচ্ছেদের পর প্রথমবারের মতো নিজের ব্যক্তিগত চাপ, খ্যাতির মূল্য এবং জীবনযাপনের সংকট নিয়েও কথা বললেন তিনি। তার কথায় স্পষ্ট- গ্ল্যামারের আলো যত উজ্জ্বলই হোক, তার আড়ালে লুকিয়ে থাকে শিল্পীর অগোচর অজস্র ত্যাগ, নিরবতা আর অস্বস্তি।

আরপি/টিকে


Share this news on:

সর্বশেষ

img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে চরমোনাই পিরের শোক Dec 19, 2025
img
দেশপ্রেমের প্রশ্নে অটল হাদি এক অবিচল সাহসের নাম : নাসির উদ্দিন নাসির Dec 19, 2025
img
ডেইলি স্টারের সামনে সাংবাদিক নূরুল কবীর নাজেহাল Dec 19, 2025
img

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধে তীব্র যানজট

চালক-যাত্রীদের অনুরোধেও সড়ক ছাড়েননি ছাত্র-জনতা Dec 19, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোক Dec 19, 2025
img
ঢাবির মুজিব হলের নাম বদলে শহীদ ওসমান হাদী দিলেন শিক্ষার্থীরা Dec 19, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে ছাত্রদলের শোক Dec 19, 2025
img
আধিপত্যবাদের দোসররা শান্তিপূর্ণ ক্ষোভকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে: ডাকসু ভিপি Dec 19, 2025
img
সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান পিনাকীর Dec 19, 2025
img
উত্তাল শাহবাগ, আন্দোলনে যোগ দিলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা Dec 19, 2025
img
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ Dec 19, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে নুরুল হক নুরের শোক Dec 19, 2025
img
‘ছাদে আটকা পড়ছি, মাফ কইরা দিয়েন, ভবনে আগুন দিছে, দেখা নাও হতে পারে’ Dec 19, 2025
img
শনিবার দুপুরে মানিকমিয়া অ্যাভিনিউতে হাদির দ্বিতীয় জানাজা Dec 19, 2025
img
সংবাদ প্রতিষ্ঠানে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে: মাহফুজ আলম Dec 19, 2025
img
রাবিতে আওয়ামীপন্থি ডিনদের পদত্যাগের দাবিতে রাকসু জিএসের আল্টিমেটাম Dec 19, 2025
img
আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান ডিএমপি কমিশনারের Dec 19, 2025
img
হাদির জন্য শুক্রবার সারাদেশে দোয়া-প্রার্থনার আহ্বান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের Dec 19, 2025
img
হাদির মৃত্যুর খবরে নওফেলের বাসায় অগ্নিসংযোগ, ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ Dec 19, 2025
img
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর Dec 19, 2025