বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে লালন করতে হবে : জাহিদুল ইসলাম

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই ও আগস্টের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এই বাংলাদেশ ফ্যাসিব্যাদমুক্ত, ন্যায় ও ইনসাফের বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই স্বপ্ন আর অগ্রযাত্রা নিয়ে যখন আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি নব্য একটি ফ্যাসিস্ট, ফ্যাসিবাদের মতবাদ নিয়ে আবারো বাংলাদেশের উন্নয়নকে ও বাংলাদেশের ন্যায়-ইনসাফকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। 

শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত ছাত্র-যুব সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, একটি দল বিদেশ থেকে তারা দলকে পরিচালনা করছে। আমরা বলতে চাই এই বাংলাদেশের জমিনে বিদেশে বসে বসে কোনো দল রাষ্ট্র পরিচালনার স্বপ্ন দেখবেন না। এই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে হলে বাংলাদেশের মানুষের সাথে বসে, বাংলাদেশের মানুষের সাথে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, একটি দল, আমরা তাদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া যে দল বিএনপি, জিয়াউর রহমানের যে চিন্তা ছিল, সেই আদর্শ এখন আর বিএনপিতে নেই। খালেদা জিয়ার মতো আপসহীন নেত্রীর যে বিএনপি, সেই বিএনপি এখন আর নেই। আজকের সেই দল একটি হত্যাকারী দলে পরিণত হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে তারা দুইশর বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। ১৫০ মতো মানুষ নিজেদের কোন্দলের কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হাসিনা যাওয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম এই বাংলাদেশ চাঁদাবাজমুক্ত হয়ে যাবে। জুলুম, অন্যায় ও ধর্ষণ থাকবে না। কোনো টেন্ডারবাজি থাকবে না। কিন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি নতুন একটি দল হাসিনার ইজারা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। তারা হাসিনার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তাই আপনাদের হুঁশিয়ারি ও সাবধান করছি ভালো হয়ে যান। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে লালন করতে হবে। উদারতার মানসিকতা নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হবে। 

জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিগত দিনে যারাই আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল, তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল তাদেরকে গুম খুনের মাধ্যমে খুনি হাসিনা হত্যা ও নির্যাতন করেছিল। কিন্ত সেই নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় এই প্রজন্মের মধ্যে একটি জাগরণ তৈরি হয়েছিল। সেই জাগরণের প্রেক্ষিতে দুই হাজার চব্বিশের জুলাই ও আগস্টে শুধু ছাত্ররা নয়, ছাত্রদের পাশাপাশি আপমর ছাত্র-জনতা বাংলাদেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ আবাবিল পাখির মতো খুনি হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। এর মাধ্যমে খুনি হাসিনার পতন হয়েছে এবং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

ছাত্রসংসদগুলো নিয়ে তিনি বলেন, আমরা বিজয়ী হওয়ার পর বলা হয়েছিল আমরা নাকি ছাত্র সংসদগুলো পরিচালনার করতে পারবো না। শুধু পারবো না ইনশাআল্লাহ, আমরা রেকর্ড গড়ে দেব বাংলাদেশে। বাংলাদেশের ছাত্র সংসদ কীঢভাবে পরিচালনা করতে হয় তার জন্য অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে আগামী দিনে উজ্জল দৃষ্টন্ত স্থাপন করবেন আমাদের ভাইয়েরা ইনশাআল্লাহ। আমরা যখন মাদক নির্মূল করার উদ্যোগ গ্রহণ করছি তখন একটি পক্ষ আমাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছি তখন একটি পক্ষ আমাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাইকে হুঁশিয়ারি করতে চাই খুনি হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদী বা আধিপত্যের রাজনীতি চলবে না। 

ভারত প্রসঙ্গে ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় আমাদের বোন ও ভাইদেরকে বিভিন্ন সময় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র, তারা আমাদেরকে এতদিন বন্ধু রাষ্ট্র পরিচয় দিয়ে এসেছে। বন্ধুর পরিচয় দিয়ে তারা বারবার আমাদের বুকে ছুরিকাঘাত করেছে। তারা আমাদের দেশের সীমান্তে গুলি করে মানুষ হত্যা করে। আমাদের দেশের নদীগুলোতে বাধ দিয়ে খরা ও বন্য তৈরি করে। তারা আমাদের দেশের শত শত মায়ের বুক খালি করা গণহত্যাকারী খুনি হাসিনাকে যারা আশ্রয় দেয় তারা কখনোই আমাদের বন্ধু হতে পারে না। 

জামায়াতে ইসলামী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু বকরের সভাপতিত্বে এবং সদর উপজেলা আমির হাফেজ আব্দুল আলিমের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও রাজশাহী মহানগরী আমির ড. কেরামত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ড. মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩ আসনের সাবেক এমপি অধ্যাপক লতিফুর রহমান প্রমুখ। 

এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, সকল উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির- সেক্রেটারিসহ সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


ইউটি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিমানবন্দরে নেমে তারেক রহমানের কুশল বিনিময় Dec 25, 2025
img
মাঠের বাইরে সমস্যায় ইংল্যান্ড, ভাবনার অপেক্ষা Dec 25, 2025
img
তারেক রহমানকে স্বাগত জানালেন সিনিয়র নেতারা Dec 25, 2025
img
সারাদেশে রাতে শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হতে পারে Dec 25, 2025
img
কালিয়াকৈরে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ১ Dec 25, 2025
img
আইএল টি-টোয়েন্টি শেষে দেশে ফিরছেন তাসকিন-মোস্তাফিজ Dec 25, 2025
img
হলিউড অভিনেতা রাসেল ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে নতুন মামলা Dec 25, 2025
img
বড়দিনে সপরিবার টলিউড তারকারা! Dec 25, 2025
img
অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে তারেক রহমানকে স্বাগত : সারজিস Dec 25, 2025
img
তারেক রহমানের অপেক্ষায় গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়ি Dec 25, 2025
img
বিপিএল শুরুর আগে চট্টগ্রাম র‌য়্যালসের দল প্রত্যাহারের আবেদন Dec 25, 2025
img
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজট Dec 25, 2025
img
হোয়াটসঅ্যাপের পর অন্যান্য অ্যাপেও নিষিদ্ধ হতে পারে অ্যাকাউন্ট Dec 25, 2025
img
ঢাকায় পৌঁছালেন তারেক রহমান Dec 25, 2025
img
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর হুমায়ুন কবীরের হুংকার: ‘অপেক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রী’ Dec 25, 2025
img
দেশের রিজার্ভ বেড়ে এখন ৩২.৭৯ বিলিয়ন ডলার Dec 25, 2025
img
মোস্তাফিজের খেলায় চমক, গোয়েন্দারাও বুঝতে পারছেন না Dec 25, 2025
img
ডিসেম্বরের ২৩ দিনেই দেশে এলো আড়াই বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স Dec 25, 2025
img
ওপেনএআইয়ে ডিজনির ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ! Dec 25, 2025
যেই ইবাদতকে আমরা আমল মনে করি না। ইসলামিক জ্ঞান Dec 25, 2025