বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে: নাহিদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, নির্বাচনের পরও বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। গত ১৬ বছরে যত গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, তার বিচার যেন অব্যাহত থাকে, বিচার কার্যক্রম ও ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে কোনো বাধা না দেওয়া হয়, সে প্রতিশ্রুতি সব রাজনৈতিক দলকে দিতে হবে।

শনিবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণমিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।

এর আগে রাজধানীর বাংলামটর থেকে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে তিন দফা দাবিতে গণমিছিল শুরু হয়। এতে নাহিদ ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র সদস্য সচিব তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

এছাড়াও জাতীয় যুবশক্তি, জাতীয় শ্রমিক শক্তি, জাতীয় ছাত্রশক্তিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও মিছিলে অংশ নেন। এসময় তারা ‘খুনি হাসিনার বিচার চাই,’ ‘লীগ ধর, জেলে ভর’সহ একাধিক স্লোগান দেন। এনসিপির মিছিলটি শাহবাগ হয়ে মৎভবন এলাকা প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় নাহিদ তার বক্তব্যে বলেন, জুলাইয়ে শহীদ ও আহতদের কাছে আমরা সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটানোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এ বিষয়ে কোনো আপস করব না। যারা সংস্কার ও বিচারের প্রশ্নে আপস করবে, আমরা তাদের প্রতি কঠোর থাকব।

নাহিদ বলেন, আজকে রাজপথে নেমেছি, হাসিনার যে রায় হয়েছে, তা যেন অতি দ্রুত কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়েই মানুষ ইনসাফ পাবে। এ রায় কোনো রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের মজলুম মানুষের প্রতি ন্যায়বিচার। ফলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যে কূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন, তা সরকার শুরু করবে বলে আশা করি। তিনি বলেন, আমরা তিনদফা দাবিতে রাজপথে নেমেছি। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে বিচার করতে হবে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে এবং জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য জোটসঙ্গী দলগুলোকে বিচারের আওতায় নিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির নামে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের চেষ্টা হচ্ছে। যাদেরকে ঐকমত্য কমিশন, জুলাই সনদসহ কোথাও রাখা হয়নি, তারা কোন ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেবে। এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এনসিপি মাঠে থাকবে।

নাহিদ বলেন, গত ৫০ বছর ধরে ভারত বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে শোষণ করেছে। গত ১৫ বছর তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছে। শেখ হাসিনাকে ভারতে জায়গা দিয়ে সেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলে শেখ হাসিনাকে এ দেশে পাঠানোর আহ্বান জানান নাহিদ।

তিনি বলেন, ভারত কেবল শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়নি, আওয়ামী লীগ দেশের ভেতর যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে, তাকেও সমর্থন করছে। আমরা ভারতের জনগণের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনাদের দেশে কোনো গণহত্যাকারীকে স্থান দেবেন না। ভারতের ছাত্রদের বলব, জুলাই-আগস্টে যেভাবে আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন, এখনও সেভাবে সমর্থন জানান।

সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ভারত সরকার এবং তাদের দেশের বাহিনী ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে। আমরা ভারতের কাছে বলতে চাই, নিজের দেশের নাগরিকদের নয়, খুনি হাসিনাকে পুশ-ইন করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার রায় কার্যকর দেখতে চায়।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার হিম্মত থাকলে ভারতে থেকে নয়, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নয়, বাংলাদেশের আদালতের কাছে আত্মসমর্থন করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ খুঁজতো। যেহেতু তারা জানে তারা খুন করে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, সে কারণে তারা সাহস দেখাতে পারেনি।

তিনি বলেন, সে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অবস্থান নিতে পারে না। এই শিক্ষক নামের কলঙ্করা বাংলাদেশে গণহত্যা চাপিয়ে দিতে চায়। তারা চায়, আবারও কেউ ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসবে, তাদের সমর্থন দিয়ে নিজেদের পদ-প্রমোশন করবেন। ছাত্ররা তাদের বয়কট করবে বলে আশা করি।

ইউটি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিমানবন্দরে নেমে তারেক রহমানের কুশল বিনিময় Dec 25, 2025
img
মাঠের বাইরে সমস্যায় ইংল্যান্ড, ভাবনার অপেক্ষা Dec 25, 2025
img
তারেক রহমানকে স্বাগত জানালেন সিনিয়র নেতারা Dec 25, 2025
img
সারাদেশে রাতে শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হতে পারে Dec 25, 2025
img
কালিয়াকৈরে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ১ Dec 25, 2025
img
আইএল টি-টোয়েন্টি শেষে দেশে ফিরছেন তাসকিন-মোস্তাফিজ Dec 25, 2025
img
হলিউড অভিনেতা রাসেল ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে নতুন মামলা Dec 25, 2025
img
বড়দিনে সপরিবার টলিউড তারকারা! Dec 25, 2025
img
অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে তারেক রহমানকে স্বাগত : সারজিস Dec 25, 2025
img
তারেক রহমানের অপেক্ষায় গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়ি Dec 25, 2025
img
বিপিএল শুরুর আগে চট্টগ্রাম র‌য়্যালসের দল প্রত্যাহারের আবেদন Dec 25, 2025
img
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজট Dec 25, 2025
img
হোয়াটসঅ্যাপের পর অন্যান্য অ্যাপেও নিষিদ্ধ হতে পারে অ্যাকাউন্ট Dec 25, 2025
img
ঢাকায় পৌঁছালেন তারেক রহমান Dec 25, 2025
img
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর হুমায়ুন কবীরের হুংকার: ‘অপেক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রী’ Dec 25, 2025
img
দেশের রিজার্ভ বেড়ে এখন ৩২.৭৯ বিলিয়ন ডলার Dec 25, 2025
img
মোস্তাফিজের খেলায় চমক, গোয়েন্দারাও বুঝতে পারছেন না Dec 25, 2025
img
ডিসেম্বরের ২৩ দিনেই দেশে এলো আড়াই বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স Dec 25, 2025
img
ওপেনএআইয়ে ডিজনির ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ! Dec 25, 2025
যেই ইবাদতকে আমরা আমল মনে করি না। ইসলামিক জ্ঞান Dec 25, 2025