৮ বছর পরও চিরস্মরণীয় বারী সিদ্দিকীর নাম

ক্যারিয়ারের শুরুতে বংশীবাদক হিসেবে পরিচিতি পেলেও পরে গান গেয়েই শ্রোতার মন জয় করেছিলেন বারী সিদ্দিকী। হিজলে তমালে ছাওয়া আদি-অন্তহীন হাওরের বুক থেকে গান নিয়ে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সারা বাংলায়। জল ছলছল লিলুয়া বাতাসে ভেসে সেই অপরূপ গানে স্পর্শ করেছিলেন সমগ্র বাংলাভাষী মানুষদের মন।

২০১৭ সালের আজকের দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’সহ বেশ কিছু আলোচিত গানের এই শিল্পী।

বরেণ্য এই সংগীতশিল্পীকে ছাড়াই কেটে গেল আটটি বছর।

বারী সিদ্দিকী স্মরণে ‘বারী সিদ্দিকী স্মৃতি পরিষদ’ এর রামপুরার কার্যালয়ে আজ সন্ধ্যায় এক মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এতে তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন স্মৃতি পরিষদ।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দেশের একটি গণমাধ্যমতে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ‘আজ সকালের গান’ অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী প্রিন্স আলমগীর।

দেড় ঘণ্টার সরাসরি এ অনুষ্ঠানে তিনি গান ‘শুয়া চান পাখি’, ‘মানুষ ধরো, মানুষ ভজো’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘দেখবে খোদার মহান ছবি’, ‘পরশমণি’, ‘ওগো ভাবিজান নাউ বাইয়া’, ‘আমার দয়াল রে’ ‘শুনগো মাসহ আরও কয়েকটি গান।



অল্প বয়স থেকেই গান ও বাঁশির সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে বারী সিদ্দিকীর। শৈশবে সংগীতময় পরিবেশেই বড় হয়েছিলেন বারী সিদ্দিকী। তাঁর মা গান জানলেও সামাজিক কারণে তা প্রকাশ করতেন না।

তবে ছেলের শিল্পী হয়ে ওঠার পথে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড় প্রেরণা। দিন-রাত অনুশীলন করতেন, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বাঁশির মাধ্যমে পরিচিতি পাননি; বরং শুনতে হয়েছে তিরস্কারও।

কষ্ট জমতে জমতেই ধীরে ধীরে গানের জগতে পথচলা শুরু করেন তিনি। গাইতে শুরু করলে শ্রোতারা বিস্মিত হয়েছিলেন তাঁর কণ্ঠে। তখনই অনেকে প্রশ্ন করেছিলেন ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’ অথচ সংগীতে তাঁর প্রথম পরিচয় হওয়া উচিত ছিল বাঁশিতে এটা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন তিনি।

দেশের বাইরে বাঁশিবাদক হিসেবে সম্মান পেলেও দেশে পরিচিতি আসে গানের মাধ্যমেই।

পেশাদার ক্যারিয়ারে তিনি শুধু শিল্পী নন, সুরকার হিসেবেও ছিলেন ব্যস্ত। সুবীর নন্দী, মনির খান, আসিফসহ অনেক শিল্পীর জনপ্রিয় গানে সুর দিয়েছেন তিনি। অথচ সুরকার হিসেবে ব্যস্ততা বাড়তে থাকলেও তাঁর মনে প্রশ্ন ছিল ‘বংশীবাদক হয়ে কি তবে মূল্যায়ন সম্ভব নয়?’

হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে তাঁর গানের সত্যিকারের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। ‘শুয়া চান পাখি’, ‘আমি একটা জিন্দা লাশ’ আজও যেমন চেয়ার ছুঁয়ে শ্রোতার মনে নস্টালজিয়ার ঢেউ তোলে, তেমনি মানুষের কাছে তাঁকে অমর করে রেখেছে ‘মানুষ ধরো, মানুষ ভজো’ বা ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’।

জীবদ্দশায় অপরিমেয় ভালোবাসা সম্মান পেলেও নিজের অর্জন নিয়ে তৃপ্ত ছিলেন না তিনি। কাছের মানুষদের কাছে বহুবার বলেছিলেন ‘ভেবেছিলাম আরও বড় কিছু হবে, কিন্তু জীবনে ঠিক তা হলো না।’

এমকে/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img

প্রধান বিচারপতি

সংবিধান পরিবর্তনকে হুমকি নয়, গণতান্ত্রিক সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে Dec 18, 2025
img
অমিতাভের প্রেমে পাগল রেখা কেন মুকেশকে বিয়ে করেছিলেন? Dec 18, 2025
img
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকার শপথ করালেন ফজলুর রহমান Dec 18, 2025
img
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ১ ও ২ এপ্রিল Dec 18, 2025
img
বিপিএলকে চ্যালেঞ্জ বলার কারণ জানেন না বুলবুল Dec 18, 2025
img
ফয়সালের জামিনের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই: আসিফ নজরুল Dec 18, 2025
img
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত Dec 18, 2025
img
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচের টিকিটমূল্য প্রকাশ Dec 18, 2025
img
যারা আমার বোনের জীবন তছনছ করে দিয়েছে, তাদের জীবন শান্তিতে থাকতে দেব না: তারেক রেজা Dec 18, 2025
img
'হাদির মাথায় জটিল অপারেশনের শেষ চেষ্টা চলছে' Dec 18, 2025
img
বাংলা একাডেমির নাট্যজন পুরস্কার পাচ্ছেন তারিক আনাম খান Dec 18, 2025
img
‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ নিয়ে হলিউডসহ বিশ্বজুড়ে উন্মাদনা তুঙ্গে Dec 18, 2025
img
নির্বাচন করার সাহস পেলেন কীভাবে, জানালেন আসিফ মাহমুদ Dec 18, 2025
img
মেসির ভারত সফরে টাকা উড়েছে : ছবি তুলতে ১০ লাখ, বিশেষ সাক্ষাতে ১ কোটি! Dec 18, 2025
img
শাকিবকে টেক্কা দিতে এবার আসছে সিয়াম Dec 18, 2025
img
৯৫ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভাঙলেন দুই কিউই ওপেনার Dec 18, 2025
img
বড়দিনের আগেই সেনাসদস্যরা পাবেন বোনাস চেক- ঘোষণা ট্রাম্পের Dec 18, 2025
img
বাতাস অস্বাস্থ্যকর, বছরে প্রাণ হারাচ্ছে ১০ লাখ মানুষ : বিশ্বব্যাংক Dec 18, 2025
img
‘আমার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু’ -সহযোদ্ধাকে জানিয়েছিলেন রুমী Dec 18, 2025
img
শেখ হাসিনা ও ১২ সেনা কর্মকর্তার বিচার শুরুর আদেশ ট্রাইব্যুনালের Dec 18, 2025