ইসলাম এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি : এ টি এম আজহারুল

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ইসলাম এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের একমাত্র গ্যারান্টি। বিগত ৫৪ বছরে মানুষের তৈরি আইনে দেশ চললেও জনগণের মুক্তি আসেনি। যারা আল্লাহকে ভয় করেন তারাই সুশাসন ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। অতীতে জামায়াতের মন্ত্রী-এমপিরা এক পয়সার দুর্নীতিও করেননি।
তাই আগামী নির্বাচনে জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব হবে।

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকাল ৩টায় মোহাম্মদপুর টাউন হল শহীদ পার্ক মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা-১৩ আসন আয়োজিত ছাত্র, যুব ও নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। সঞ্চালনায় ছিলেন আসনের নির্বাচন পরিচালক ডা. শফিউর রহমান।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোবারক হোসাইন। উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব আব্দুল আউয়াল আজমসহ অন্য নেতারা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা জামায়াতকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি আখ্যা দিলেও প্রকৃতপক্ষে জামায়াতই স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি। শত জুলুম-নির্যাতনের মধ্যেও জামায়াত নেতৃবৃন্দের দেশত্যাগ না করাই এর বাস্তব প্রমাণ।

তিনি বলেন, যিনি ‘শেখের বেটি পালায় না’ বলে গর্ব করেছিলেন, তিনিই আজ দেশত্যাগ করে প্রমাণ করেছেন কে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি।
তিনি আরো বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। কিন্তু নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হলেও নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত। আমরা চাইছি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণভোটের পর নির্বাচন হোক। তবে একটি পক্ষ গণভোটে রাজি হলেও তারা সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোটের পক্ষে, যা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।

এ কারণে সম্ভাব্য যেকোনো বিশৃঙ্খলার দায়ভার অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে। তিনি সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি জানান।

প্রধান বক্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে নির্বাচনী আবহ ও দাঁড়িপাল্লার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হলেও ষড়যন্ত্র বন্ধ নেই। তাই সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। তিনি দ্বিন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

সমাবেশের বিশেষ অতিথি ও ঢাকা-১৩ আসনের মনোনীত প্রার্থী মোবারক হোসাইন রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার সমস্যাগুলো তুলে ধরে দীর্ঘ বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর একটি ঐতিহ্যবাহী ও সম্ভাবনাময় এলাকা। তবে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাহীন নগরায়ণ, যানজট, জলাবদ্ধতা, মাদক ও চাঁদাবাজি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। একটি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও সুশৃঙ্খল আবাসিক পরিবেশ এখন সময়ের দাবি।

তিনি আরো বলেন, উন্নয়নের পাশাপাশি ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা জরুরি। তরুণদের টেকসই কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগ নিশ্চিত করতে পারলে সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।
আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে মোবারক হোসাইন বলেন, মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও চাঁদাবাজিমুক্ত মোহাম্মদপুর গঠন আমাদের অঙ্গীকার। এ লক্ষ্যে নাগরিক সহযোগিতা এবং প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ ও সৃজনশীলতা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তাই শিক্ষা, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণকে অগ্রাধিকার দিয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘ জুলুম-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে জামায়াতের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিনের বিজয় নিশ্চিত করতে এই ইতিবাচক পরিবেশকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। তিনি দ্বিন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

সমাবেশে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনী পরিবেশ এবং এলাকার জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয় এবং এতে বিপুলসংখ্যক ছাত্র, যুব ও নাগরিক অংশগ্রহণ করেন।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

জুমার দিনের দুয়া কবুলের ২টি সময় Dec 23, 2025
img
মালদ্বীপে সাগরতীরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন মেহজাবীন-আদনান Dec 23, 2025
ফের ঢাকায় আসছেন আতিফ আসলাম, ভক্তদের আনন্দের খবর. Dec 23, 2025
‘গেম চেঞ্জার’ সালাহ, ইনজুরি টাইমের গোলে মিশরের জয় Dec 23, 2025
img
নেইমারের ক্যারিয়ারে নতুন মোড় Dec 23, 2025
img
বড়দিনে কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে একাধিক সিনেমা Dec 23, 2025
ফের ঢাকায় আসছেন আতিফ আসলাম, ভক্তদের আনন্দের খবর Dec 23, 2025
img
নিজের দেশের সমস্যায় মনোযোগ দেওয়া উচিত ট্রাম্পের: মাদুরো Dec 23, 2025
শোবিজে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আরশ ও তিশা, ভক্তদের উচ্ছ্বাস Dec 23, 2025
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এলিটে জিতেছে আল-হিলাল ও আল-আহলি Dec 23, 2025
জুমার দিনের দুয়া কবুলের ২টি সময় | ইসলামিক জ্ঞান Dec 23, 2025
img
৫ বছর পর বাগদানের পোশাক নিয়ে মুখ খুললেন মিম Dec 23, 2025
img
৭ দেশে স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন Dec 23, 2025
img
তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে রাজশাহী থেকে যোগ দেবেন ৩৫ হাজার নেতাকর্মী Dec 23, 2025
img
‘বারাণসী’-তে পারিশ্রমিক নিলেন না মহেশ বাবু, বাকিদের পারিশ্রমিক কত? Dec 23, 2025
img
লোহিত সাগর তীরে বিলাসবহুল দ্বীপে রোনালদোর ২ ভিলা Dec 23, 2025
img
বিপিএল মাতাতে রাজশাহী ওয়ারিয়র্সে লঙ্কান পেসার বিনুরা Dec 23, 2025
img
সরাসরি নিয়োগে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ করে অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ Dec 23, 2025
img
অ্যালেন শুভ্র ও তাবাসসুম ছোঁয়া কি সম্পর্কে জড়িয়েছেন? Dec 23, 2025
img
গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত লিওনেল মেসির বোন Dec 23, 2025