‘আপসহীন নেত্রী’ খালেদা জিয়াকে নিয়ে ছাত্রশিবির সভাপতি মন্তব্য

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে যতটুকু জানার সুযোগ হয়েছে আমি ছাত্রসংগঠক হিসাবে, সচেতন নাগরিক হিসেবে উনার প্রতি মুগ্ধ। এর বিশেষ কারণ ৩টি -

১. বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভাজনের দেয়াল ভেঙে তিনি ঐক্যের সূচনা করেছিলেন।
২. আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে উনার সাহসী অবস্থান।
৩. পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে কৌশলী অবস্থান ছিল দূরদর্শী নেতৃত্বের গুণাবলি। 

তিনি বলেন, শৈশব থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও খুনি হাসিনাকে দেখে বড় হয়েছি। বেগম জিয়ার চরিত্রের অন্যতম দিক ছিল ‘নম্রতা বা সফটনেস’। যেখানে খুনি হাসিনা সম্পূর্ণ তার বিপরীত। তবে বেগম জিয়াকে যে পরিচয়ে সবচেয়ে বেশি চিনেছি তা হলো-দেশের স্বার্থে তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’। যার প্রমাণ ১/১১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করছি। তিনি জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন কিন্তু ফ্যাসিবাদ ও দেশবিরোধী কোনো আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে নূন্যতম মাথা নত করেননি। 

জাহিদুল ইসলাম বলেন, বেগম জিয়ার অসুস্থতায় দলমত-নির্বিশেষে সবাই যেভাবে দোয়া করছেন, এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে খুব মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। বাংলাদেশের পরিবর্তিত নতুন এই সময়ে উনার চিন্তা ও পরামর্শ আমাদের এই প্রজন্মের খুব বেশি প্রয়োজন। আল্লাহ উনাকে সুস্থ করে দিন। 

ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন, তারেক রহমানকে যতটুকু দেখেছি উনাকে একজন স্মার্ট ব্যক্তি হিসাবে জানি। কথিত দুর্নীতি ও হাওয়া ভবন ইস্যুতে উনার বিষয়ে অনেক সমালোচনা থাকলেও আমি উনাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলাম যে, ৩৬ জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে তিনি রাজনীতিতে নয়া সংস্কৃতি ও একটি স্মার্ট মুভ দিবেন। উদারতা সমৃদ্ধ ও বিভাজন মুক্ত রাজনীতি করবেন। কিন্তু গত দেড় বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির যে চরিত্র তা কোনোভাবেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়ার আদর্শের সাথে মিলাতে পারছি না। আমি জানি না এতে তারেক রহমানের হাত আছে কি না; না কি অন্যকোনো শক্তি বা নেতাদের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হচ্ছেন। বিশেষত ছাত্রদলের সাথে ছাত্রশিবিরের ৩৬ জুলাই অভ্যুত্থানের আগের সম্পর্ক ও পরের সম্পর্কের মাঝে যে এক অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা-এটা ঠিক কার ইচ্ছায় আল্লাহ ভালো জানেন।  

জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, আমি নির্ভরযোগ্য তথ্যের আলোকে এটা জানি যে- জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপির সাথে জাতীয় স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েই সম্পর্ক অটুট রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, যা এখনো চলমান। কিন্তু এক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতের প্রতি অনেকটা তাচ্ছিল্যের আচরণ করা হয়েছে। বিএনপি নিজেদেরকে ও আওয়ামী লীগ ছাড়া কাউকে সরকারি দল ও বিরোধী দল হিসাবেই ভাবতে রাজি নয়। কী আজব চিন্তা! দেখা যাক সময় বলে দিবে এই চিন্তা কতটুকু বাস্তব। তারা সবচেয়ে মারাত্মক যে পলিসি নিয়েছে তা হলো- ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মত ৭১এর সঠিক স্পিরিট লালন না করে ৭১, ৭১, ৭১ জিকির তুলা। আদর্শিক বয়ানের বিপরীতে চেতনার ব্যবসা এই প্রজন্ম কতটা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে তা বুঝার মত জ্ঞান কি তারেক রহমানের হয় নাই! বিএনপি ঠিক কার ইশারায় বিভাজনের সেই পুরনো রাজনীতিতে ডুব দিলো-তা কোনোভাবেই বোধগম্য নয়! 

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে আমি যখন কারাগারে যাই আমাকে আহত অবস্থায় আমদানি সেল থেকে কারা হাসপাতালে দেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে অনেককে পেলাম যাদের পায়ে গুলি করা হয়েছিল। অনকের পা কেটে ফেলতে হয়েছে। সে কি বীভৎস চিত্র যা ভাষায় প্রকাশ করার নয়! প্রায় ৬ মাস কারা জীবনে ছাত্রশিবির ও জামায়াতের ভাইদের নির্যাতনের চিত্র ও ঘটনা যেমন দেখেছি, ঠিক বিএনপির ভাইদের অনেক ইতিহাসও আমার জানা আছে। গত প্রায় ১৫টি বছর খুনি হাসিনা ছাত্রশিবির ও জামায়াতের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে। পাশাপাশি হাজার হাজার বিএনপির নেতা-কর্মীদের খুন, গুম, রিমান্ড, বাড়িঘর ছেড়ে ধান ক্ষেত ও খাল-বিলে জীবন কাটাতে হয়েছে-তার সাক্ষী আমরা। কিন্তু ৩৬ জুলাই পরবর্তী বিএনপির পলিসি মেকাররা ঠিক কোন রাজনীতি শুরু করলেন-আমি কিছুতেই তার হিসাব মিলাতে পারি না। 

তিনি আরও বলেন, আমি তারেক রহমানের উপর আশাহত হতে চাই না। উনি কারও শৃঙ্খলে আবদ্ধ না থেকে নিজের স্বকীয়তা ও পিতা-মাতার রক্তকে ধারণ করে রাজনীতি করুক। আমার বিশ্বাস-ছাত্রশিবিরসহ সকল দেশপ্রেমিক বিপ্লবী শক্তি উনাকে ভালোবেসে সহযোগিতা করবে। আমরা কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে না। যাদের মাঝে ফ্যাসিবাদী আচরণ ও আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে মাথা নত করার প্রবণতা দেখা যায়-বিশ্বাস করুন এই প্রজন্ম তাদেরকে একদম সহ্য করতে পারে না। 

দুটি টি কথা বলে রাখি, ইনশাআল্লাহ সময় করে ভবিষ্যতে মিলিয়ে নিবেন-

১. শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আপসহীন নেত্রীর আদর্শকে বিএনপি যতদিন ধারণ করতে পারবে, সে আলোকে দলের পলিসি নির্ধারণ করতে পারবে, ঠিক ততদিন বাংলাদেশে বিএনপি টিকে থাকবে। উনাদের ২জনের আদর্শকে মাইনাস করে এর বিপরীত চিন্তা ও রাজনীতি কোনোভাবেই টিকবে না। আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে।

২. বাম ও কথিত বন্ধু রাষ্ট্র (আধিপত্যবাদী) এ দেশের কোনোদিনই ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকার করে নাই। স্বার্থ হাসিল, বিভাজন ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলাম বিদ্ধেষই- তাদের প্রধান এজেন্ডা। তারা যাদের ওপর সওয়ার হয় দেশের ক্ষতির পাশাপাশি সেই দল বা আদর্শের ১২টা বাজিয়ে ছেড়ে দেয়।

আমাদের মনে রাখা উচিত-ক্ষমতা কখনোই স্থায়ী হয় না, কিন্তু আচরণ ও আদর্শ মানুষকে ভালোবাসা কিংবা ঘৃণার স্থায়ী পাত্র বানিয়ে দেয়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে দেশের স্বার্থে সঠিক বুঝ দান করুন। 

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সাবিনাদের জন্য দুই নারী ইরানি কোচ নিয়োগ Dec 23, 2025
img
সরকার যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত : প্রধান উপদেষ্টা Dec 23, 2025
img
ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে জোরালো পদক্ষেপের আশ্বাস ইশরাকের Dec 23, 2025
img
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রার্থনা Dec 23, 2025
img
মিষ্টি কমলালেবু চেনার উপায় Dec 23, 2025
img
নূরুল কবিরের বক্তব্য আমাদের আহত করেছে: জামায়াত Dec 23, 2025
img
বন্যাবিধ্বস্ত পাঞ্জাবের ‘প্রাণ’ ফেরালেন বাদশা Dec 23, 2025
img
ঘন কুয়াশা ও তাপমাত্রা নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কতা Dec 23, 2025
img
শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র বন্ধ করে দিল বিক্ষোভকারীরা Dec 23, 2025
img
৩ জানুয়ারি ঢাকায় জামায়াতের মহাসমাবেশ Dec 23, 2025
img
নুরের ওপর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হামলার বিচার দাবি ডাকসুর Dec 23, 2025
img
পুলিশ সদর দপ্তরের ৬ ডিআইজি নতুন দায়িত্বে Dec 23, 2025
img
সুনামগঞ্জে ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার Dec 23, 2025
img
তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে: ইশরাক Dec 23, 2025
img
বিএনপিতে যোগদানের একদিন পরই ডিবি’র হাতে আটক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা Dec 23, 2025
img
তারকা-রাজনীতিবিদদের যোগ্যতা নিয়ে মুখ খুললেন কৌশিক ব্যানার্জি Dec 23, 2025
img
সিরাজগঞ্জে গণঅধিকার পরিষদ নেতার মরদেহ উদ্ধার Dec 23, 2025
img

সোনু সুদ

মাত্র এক টাকার বিনিময়ে আপনি অনেক আশীর্বাদ পেতে পারেন Dec 23, 2025
img
টঙ্গীতে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মশাল মিছিল Dec 23, 2025
img
সাভারে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার Dec 23, 2025