মুজিববাদ ও মওদুদীবাদের বিরুদ্ধে বিএনপি-এনসিপির ঐক্য চান পাটোয়ারী

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান ও আবুল আ‘লা মওদুদীর মতাদর্শের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে বিএনপি ও এনসিপিকে ‘দায়িত্বশীল ঐক্য’ গঠন করা উচিত। মঙ্গলবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মনে করেন, মুজিববাদ ও মওদূদীবাদের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য এবং একটি নতুন, ন্যায়ভিত্তিক, আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের দায়ভার থেকে এনসিপি ও বিএনপির ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন।

ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে আমরা বহুদিন ধরে ব্যক্তি ও দলের সংকট হিসেবে দেখে ভুল করেছি। এই সংকট বেগম জিয়া বা তারেক জিয়ার নয়, এটি এক গভীরতর রাষ্ট্রগত সংকট, যা ব্যক্তি-নির্ভর ব্যাখ্যার ঊর্ধ্বে। পরিবারতন্ত্রের যে দুর্বলতা দীর্ঘদিন বিএনপিকে জর্জরিত করেছে, সেই জায়গায় সংস্কারের পথ আমরা ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছি। ফলে বিএনপি যখন জনগণের কাছে তার ঐতিহাসিক আবেদন হারিয়েছে, তখন তারা অবলম্বন খুঁজেছে প্রতিষ্ঠানের ছায়ায়। তবুও আশা থাকে, নতুন প্রজন্ম যদি সত্যিই জেগে ওঠে, তারা পরিবারতন্ত্রের গণ্ডি ভেঙে আবারো জনপদের রাজনীতিতে ফিরতে পারে। ভারতের কংগ্রেসও আজ একই পথ খুঁজছে, পরিবারতন্ত্রের শেকল ভেঙে পুনর্গঠিত হওয়ার পথ।

নাসীরুদ্দীন মনে করেন, বাংলাদেশের প্রকৃত সংকট কোনো দল নয়, বরং দুই ধারার আধিপত্যবাদ- মুজিববাদ ও মওদূদীবাদ। তিনি বলেন, গত পাঁচ দশক ধরে ভারত–পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্সি যুদ্ধের এক দীর্ঘ ক্ষেত্র ছিল বাংলাদেশ। যার নিয়ন্ত্রণে ছিল কখনো মুজিববাদ, কখনো মওদূদীবাদ। এই দ্বৈত আধিপত্যের ফলে আমাদের রাষ্ট্র, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও প্রশাসনিক কাঠামো ক্রমশ ভেঙে পড়েছে।

শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা বলেন, ২০২৪-এর গণ অভ্যুত্থানের পর আমাদের লক্ষ্য ছিল এই প্রক্সি রাজনীতির দাসত্ব থেকে বের হয়ে সাম্য, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্রীয় কাঠামো নির্মাণ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে শিবির তার কিছু কল্যাণমূলক কাজের আড়ালে ছাত্রসমাজকে জামায়াতের হাতে তুলে দিল, কিছু পদ-পদবি ও আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে। ফলে দেশ আবারও পুরনো প্রক্সি রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে ঠেলে দেওয়া হলো।

বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের কারণ ব্যাখ্যা করে নাসীরুদ্দীন বলেন, আজ দেশপ্রেমিক শক্তির সামনে একসঙ্গে দুটি যুদ্ধ। প্রথমত, মুজিববাদ ও মওদূদীবাদের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম। দ্বিতীয়ত, একটি নতুন, ন্যায়ভিত্তিক, আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের দায়ভার। এই দুই যুদ্ধ একা কোনো দল লড়তে পারবে না। বিএনপি ও এনসিপি—গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী ধারার দুই শক্তির মধ্যে একটি দায়িত্বশীল ঐক্য প্রয়োজন। তবে এ ঐক্যের শর্ত রয়েছে। বিএনপিকে তার পুরনো সীমাবদ্ধতা ও পরিবারতন্ত্রের ছায়া থেকে বের হতে হবে। বাংলাদেশ বিনির্মানে সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে। আর যারা ভারতের প্রভাব-রাজনীতির দিকে ঝুঁকে আছে, তাদেরও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূলধারায় ফিরে আসতে হবে।

এনসিপি অবস্থান তুলে ধরে নাসীরুদ্দীন বলেন, আমাদের চারটি প্রশ্নে আপস নেই— বাংলাদেশের পুনর্গঠন, সার্বভৌম মর্যাদা, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ, নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা ও সম্মান।

নাসীরুদ্দীন জানান, ঐক্য আসুক বা না-আসুক, এনসিপি জনগণের সঙ্গে নিয়ে এই আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পথ আটকে আছে দুই ফ্যাসিবাদী প্রক্সির হাতে, মুজিববাদ ও মওদূদীবাদের আধিপত্যে। এই প্রক্সির শাসন কাঠামো ভেঙে আমরা যদি একটি ন্যায়ভিত্তিক, সৎ, জাতীয় রাষ্ট্র গড়তে চাই, তবে প্রতিটি নাগরিককে এই ঐতিহাসিক পুনর্গঠনের কাজে শামিল হতে হবে। এ লড়াই কেবল নির্বাচন বা ক্ষমতার লড়াই নয়, এটি বাংলাদেশের আত্মাকে পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে প্রথমেই বাঁচাতে হবে তার রাজনীতিকে—প্রক্সির ছায়া থেকে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বৈঠক Dec 22, 2025
img
১০ হাজার রিজার্ভ সেনার বাড়িতে অস্ত্র রাখার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল Dec 22, 2025
img
ঢাকায় বাড়ছে শীত, তাপমাত্রা নামল ১৬ ডিগ্রির ঘরে Dec 22, 2025
img
ইন্দোনেশিয়ায় বাস উল্টে ১৬ জনের মৃত্যু Dec 22, 2025
img
বাফুফের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন Dec 22, 2025
img
১৫ বছর পর বিশ্বের বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র আবারও চালু করছে জাপান Dec 22, 2025
img

বিবিএস-এর জরিপ

৯৫.৪% শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৮৭.৫% স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নত পানির উৎস Dec 22, 2025
img
রিমান্ডে নেয়ার সময় কারাগারের গেটে প্রাণ গেল আ. লীগ নেতার Dec 22, 2025
img
মরুভূমির দেশে তুষারের ছোঁয়া, বিরল দৃশ্য দেখল সৌদি আরব Dec 22, 2025
img
নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা Dec 22, 2025
img
২০২৫ কাঁপিয়েছে যেসব বলিউড সিনেমা Dec 22, 2025
img
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩২৩ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতল নিউজিল্যান্ড Dec 22, 2025
img
শরীয়তপুর ও চাঁদপুর নৌরুটে সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল স্বাভাবিক Dec 22, 2025
img
পশ্চিম তীরে নতুন ১৯টি বসতি অনুমোদন দিলো ইসরায়েল Dec 22, 2025
img
কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের তীব্রতা, বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ Dec 22, 2025
img
ম্যানইউকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা ৭ জয় অ্যাস্টন ভিলার Dec 22, 2025
img
বিশ্ব প্রতিযোগিতায় শুধু ডিগ্রি নয়, প্রয়োজন সক্ষমতাও : আসিফ নজরুল Dec 22, 2025
img
গ্রিস উপকূলে নৌকা থেকে ৪৩৭ জন বাংলাদেশি অভিবাসী উদ্ধার Dec 22, 2025
তারেক রহমানকে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে ফেনীতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা Dec 22, 2025
নারীদের লেখা গল্পে আবেগের সত্যতা আলাদা হয়: কৃতিকা কামরা Dec 22, 2025