ইউএনওডিসি'র প্রতিবেদন

১০ বছরে মিয়ানমারে আফিমের চাষ সর্বোচ্চে

মিয়ানমারের চলমান সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার মধ্যেই দেশে আফিম চাষ গত দশ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত দফতর (ইউএনওডিসি)- এর সর্বশেষ জরিপে বলা হয়েছে, গত এক বছরে দেশটিতে আফিম চাষের ক্ষেত্র ১৭ শতাংশ বেড়ে ৫৩ হাজার ১০০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। যা ২০২৪ সালে ছিল ৪৫ হাজার ২০০ হেক্টর।
জরিপে বলা হয়, বিশ্বের প্রধান অবৈধ আফিম উৎপাদনকারী রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের অবস্থান পুনঃনিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

ইউএনওডিসি এর তথ্যমতে, আফগানিস্তানে চাষ কমে যাওয়ার পর বৈশ্বিক অবৈধ আফিমের মূল উৎস হিসেবে মিয়ানমারের অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে। সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিনিধি ডেলফিন শান্টজ বলেন, আফিম চাষের এই ব্যাপক বৃদ্ধির অর্থ হলো মিয়ানমারের আফিম অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণ ঘটতে পারে।

এতে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ সালে পপি চাষের জমি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়লেও প্রতি হেক্টরে আফিম উৎপাদনের পরিমাণ কমেছে। ইউএনওডিসি বলছে, তীব্র সংঘাত, অনিরাপত্তা ও বাস্তুচ্যুতির কারণে কৃষকরা ঠিকমতো চাষ করতে পারছেন না। ফলে ফলন কম হচ্ছে।

এদিকে মূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা আবার পপি চাষে মনোযোগী হচ্ছেন। ২০১৯ সালে ১ কেজি কাঁচা আফিমের দাম ছিল ১৪৫ ডলার। বর্তমানে যার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩২৯ ডলারে। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বর্ধিত বাজারমূল্য ও জীবিকার সংকটে কৃষকদের বড় অংশ আবার পপি চাষে ঝুঁকছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে মিয়ানমার-উৎপাদিত হেরোইনের প্রবাহ বাড়ছে। ইউএনওডিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে হেরোইন সরবরাহ কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে মিয়ানমারের হেরোইন দ্রুত প্রবেশ করছে। এমনকি ২০২৪ ও ২০২৫ সালের শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এ বাণিজ্যিক বিমানের যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় ৬০ কেজি মিয়ানমার-উৎপাদিত হেরোইন জব্দ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই নতুন সরবরাহ অঞ্চল বৈশ্বিক মাদকবাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বলা হচ্ছে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে এই মাদক চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষীরা।

ডেলফিন শান্টজ বলেন, নিরবচ্ছিন্ন সংঘাত, বেঁচে থাকার সংগ্রাম এবং মূল্যবৃদ্ধির লোভ- সব মিলিয়ে কৃষকরা পপি চাষে আকৃষ্ট হচ্ছেন। গত বছরের বৃদ্ধি মিয়ানমারের ভবিষ্যতের জন্য গভীর প্রভাব ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি শুধু অঞ্চলই নয়, বৈশ্বিক মাদকবাজারকেও প্রভাবিত করবে। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে এখনই জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গণমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ইআরএফ-র‌্যাকের নিন্দা Dec 20, 2025
img
হাদির মৃত্যুতে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট, আ.লীগ কর্মী আটক Dec 20, 2025
img
নারীরা প্রতিদিন ডিম খেলে কী হতে পারে? Dec 20, 2025
হাদি হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ-স্বচ্ছ তদন্ত চাইল জাতিসংঘ Dec 20, 2025
মেসির বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার ঐতিহাসিক মুহূর্তের তিন বছর Dec 20, 2025
ম্যানসিটি ছাড়ার গুঞ্জনে পেপ গার্দিওলা দিলেন স্পষ্ট ব্যাখ্যা Dec 20, 2025
img
হাদি হত্যার প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ Dec 20, 2025
img
সরে দাঁড়ানো বিএনপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা Dec 20, 2025
img
চাকরি ছাড়ছেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী! Dec 20, 2025
img
দ্বিতীয়বার পুত্রসন্তানের বাবা-মা হলেন ভারতী-হর্ষ Dec 20, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক Dec 20, 2025
img
নীলফামারীতে পুলিশের অভিযানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৬ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Dec 20, 2025
img
ধোনিকে ছাড়িয়ে নতুন ইতিহাস, প্রথম ট্রফি জেতালেন ইশান Dec 20, 2025
img
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের চট্টগ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ Dec 20, 2025
img
২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ নতুন করে যাচাই করা হবে : গভর্নর Dec 20, 2025
img
ভারত ম্যাচে দেরি, বাফুফেকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা Dec 20, 2025
img
বিটিভির মহাপরিচালকের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ Dec 20, 2025
img
বড় অঙ্কের প্রস্তাব পেয়েও ম্যান ইউনাইটেড ছাড়েননি ব্রুনো Dec 20, 2025
img
ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচ সূচি প্রকাশ Dec 20, 2025
img
‘বাম, শাহবাগি, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে’-জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি মোস্তাফিজ Dec 20, 2025