এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হলো ভারতীয় রুপি

ভারতীয় রুপির রেকর্ড দরপতন হয়েছে। গত বুধবার এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হয়েছে এটি। চলতি বছরে রুপি এখন পর্যন্ত ৫ দশমিক ৩ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে। এটি ২০২২ সালের পর সবচেয়ে বড় বার্ষিক পতনের পথে এবং এটিকে এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত করেছে।

সম্প্রতি বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৫০ শতাংশ শুল্কই রুপির দরপতনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য চুক্তি হলে রুপির পতন ঠেকানোর একটা সুযোগ থাকলেও সেই চুক্তি এখনো অধরাই রয়ে গেছে।

তবে এই সংকটের মূল কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে ভারতের শেয়ারবাজারে। ১৯৯৩ সালের পর প্রথমবারের মতো ভারতীয় স্টক মার্কেট বিশ্বের অন্যান্য বড় বাজারের তুলনায় সবচেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। এ বছর এমএসসিআই ইন্ডিয়া সূচকের ডলারভিত্তিক রিটার্ন ছিল মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ, যেখানে বৃহত্তর উদীয়মান বাজার সূচকে রিটার্ন দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশে।

এই বিশাল ব্যবধান বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় আঘাত হেনেছে। তারা এ বছর ভারত থেকে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার তুলে নিয়ে ভালো পারফর্ম করা বাজারগুলোতে বিনিয়োগ করছে। রুপির দুর্বলতায় আপাত লাভবান হয়েছে রপ্তানি খাত। যুক্তরাষ্ট্রের ভারী শুল্কের কারণে এর আগে রপ্তানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়লেও রুপির দরপতন তাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।

ভারতের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ার কয়েকটি ত্রৈমাসিক ধরে সীমিত পরিসরে আটকে ছিল। যদিও এই সপ্তাহে সামান্য উন্নতি দেখা গেছে, তবু সার্বিকভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন তেমন নেই।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি হিসাবের ঘাটতি কিছুটা কমলেও পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতি অক্টোবর মাসে রেকর্ড ৪১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। রুপি আরও দুর্বল হতে থাকায় জ্বালানি আমদানির ব্যয় বাড়বে, পাশাপাশি বিদেশি ঋণের খরচও বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে বিমান, ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইলসহ নানা খাতের উৎপাদন ব্যয়ে। রুপির পতনে বিদেশ ভ্রমণ ও বিদেশে পড়াশোনার খরচও দ্রুত বাড়ছে। দেশটির প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন বলেন, এ নিয়ে আমি ঘুম হারাম করছে না। তিনি দাবি করেন, রুপির দুর্বলতা মুদ্রাস্ফীতিতে প্রভাব ফেলছে না এবং ২০২৬ সালে মুদ্রা পুনরুদ্ধারের আশা প্রকাশ করেন।

এইচএসবিসির এশিয়া এফএক্স প্রধান জোয়ি চিউ বলেন, প্রতিদিন বাণিজ্য চুক্তি না হওয়ার ফলে বাণিজ্য ঘাটতি ও বহির্মুখী প্রবাহ ডলার/রুপি আরও উপরে ঠেলে দিচ্ছে, অথচ বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ কমছে।

এসএস/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অনন্যার কাছে ‘জেন জি’ ভাষা শিখলেন Dec 18, 2025
img
নাম-খ্যাতি বাড়লেও সংযম হারানো যাবে না: রঞ্জিত মল্লিক Dec 18, 2025
img
উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই সরকারি বাসায় অবস্থান করছেন আসিফ-মাহফুজ Dec 18, 2025
img
সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে অবিলম্বে মুক্তি দিন: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল Dec 18, 2025
img
রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ১২ ফান্ড তদন্তে বিএসইসির ৬ কমিটি Dec 18, 2025
img
ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ, দাবি করেছেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহকারী Dec 18, 2025
img
নতুন চুক্তি করে মায়ামিতেই থাকছেন সুয়ারেজ Dec 18, 2025
img
চট্টগ্রামের চকবাজার তেলিপট্টিতে আগুন Dec 18, 2025
img
ইউনাইটেড ছাড়লে স্পেনিশ বা ইতালিয়ান ক্লাবে খেলতে চান ব্রুনো ফের্নান্দেস Dec 18, 2025
img

জুলাই হত্যাযজ্ঞ

কাদের-আরাফাতসহ ৭ নেতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল Dec 18, 2025
img
‘ধুরন্ধর’ অক্ষয় খান্নার হয়ে কি বললেন স্মৃতি ইরানি? Dec 18, 2025
img
প্রাক্তন স্ত্রী রীতা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা করলেন কুমার শানু Dec 18, 2025
img
লেভানদোভস্কির ‘অবিশ্বাস্য’ রেকর্ডে চোখ কেইনের Dec 18, 2025
img
ঢাকায় ফের চালু ভারতীয় ভিসা সেন্টার Dec 18, 2025
img
‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল ৪ লাখ ৮৩ হাজার Dec 18, 2025
img
ইউক্রেন ইস্যুতে কোনো আপস করবেন না পুতিন Dec 18, 2025
img
নেটপ্রভাবী থেকে নায়িকা, প্রীতি সরকারের নতুন অধ্যায়! Dec 18, 2025
img
শুধু পড়াশোনা করে কেউ মানুষ হয় না: যীশু সেনগুপ্ত Dec 18, 2025
img
নেইমারকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত রাখতে চায় সান্তোস Dec 18, 2025
img
তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস Dec 18, 2025