ইউক্রেনে ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ চায় যুক্তরাষ্ট্র: জেলেনস্কি

যুক্তরাষ্ট্র পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্কের সীমান্তঘেঁষা এলাকা থেকে ইউক্রেনকে সেনা সরিয়ে এনে সেখানে একটি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে—এমনটাই জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আলোচ্য শান্তিপ্রস্তাবের দুইটি বড় অমীমাংসিত বিষয় হলো—দোনেৎস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা।

ডনবাস থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাবে উদ্বেগ
রাশিয়া বর্তমানে দোনেৎস্কের যে অংশে দখল ধরে রেখেছে, তার বাইরে আরও প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা ইউক্রেনের হাতে। মস্কো এ অঞ্চল ছাড়ার শর্ত দিচ্ছে, যা ইউক্রেন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

জেলেনস্কির দাবি—এখন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি সমাধান খুঁজছে, যেখানে ইউক্রেন এই অংশ থেকে পিছু হটবে, আর রুশ বাহিনী অঙ্গীকার করবে যে তারা ওই এলাকায় আগাবে না। এ অঞ্চলকে ‘ডিমিলিটারাইজড জোন’ বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাবও এসেছে।

কিন্তু জেলেনস্কির প্রশ্ন—“রাশিয়াকে ঠেকাবে কী? তারা বেসামরিক সেজে অনুপ্রবেশ করলেই বা বাধা দেবে কে?”

তার মতে, একতরফাভাবে ইউক্রেনকে পিছু হটার পরামর্শ দেওয়াটা ন্যায়সঙ্গত নয়। একই দূরত্বে রাশিয়াকেও পিছিয়ে যেতে হবে।

জনমত গ্রহণ বা গণভোটের সম্ভাবনা
প্রস্তাবটি নিয়ে ইউক্রেন এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। জেলেনস্কি ইঙ্গিত দেন—এ বিষয়ে নির্বাচন বা গণভোট আয়োজনের পথও খোলা রাখতে পারে কিয়েভ।

তবে তিনি সতর্ক করেছেন—যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব অবস্থাই শেষ পর্যন্ত আলোচনার চিত্র পাল্টে দিতে পারে।

“আমাদের সেনারা কোথায় দাঁড়াতে পারবে, কোথায় শত্রুকে থামাতে পারবে—এটাই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের চুক্তির রূপরেখা।”

জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র: সবচেয়ে কঠিন সমীকরণ

ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২২ সালের মার্চ থেকে রুশ নিয়ন্ত্রণে।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন—রুশ বাহিনী সরে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ ব্যবস্থাপনার একটি ধারণা আলোচনায় আছে, যদিও তিনি স্বীকার করেন—এটি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা এখনও অনিশ্চিত।

ট্রাম্প প্রশাসনের ‘তাৎক্ষণিক সমাপ্তি’ চাওয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধের জটিলতায় বিরক্ত হয়ে দ্রুত সমাধান চান বলে মন্তব্য করেন জেলেনস্কি। কিয়েভের শঙ্কা—ওয়াশিংটন হয়তো শেষ পর্যন্ত রুশ স্বার্থের দিকে ঝুঁকে কোনও সমাধান চাপিয়ে দিতে পারে।

জেলেনস্কি বলেন—“যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত সমাপ্তি চাইলেও কোনও চূড়ান্ত সময়সীমা দেয়নি।”

ইউক্রেন রাতভর রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে কিছুটা শান্তি চায় এবং সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আশা করছে। বিপরীতে, রাশিয়া যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত করতে আগ্রহী, কারণ ফ্রন্টলাইনে তারা ধীরে হলেও অগ্রসর হচ্ছে।

ওয়াশিংটন–মস্কো ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কিয়েভের সন্দেহ
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সম্প্রতি বলেন—ট্রাম্প শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন এবং পুতিন-যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফের বৈঠক দুই পক্ষের ভুল বোঝাবুঝি দূর করেছে।
ইউক্রেন ও ইউরোপ এই মন্তব্যগুলোকে সতর্ক নজরে দেখছে।

জেলেনস্কির ভাষায়—“আমরা জানি না যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়ার সঙ্গে আর কী সমঝোতা আছে। সময়ই বলে দেবে।”

নিরাপত্তা গ্যারান্টি: এখনও অনিশ্চিত
জেলেনস্কি জানান—যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার একটি খসড়া তারা পেয়েছে, তবে তা এখনও অসম্পূর্ণ।

তিনি আরও বলেন—“যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ন্যাটোতে দেখতে চায় না—তারা বিষয়টি খোলাখুলিই বলে। তাই ন্যাটো নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের কথা বলতে অসুবিধা নেই।”

ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার বার্তা
সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা ভাগাভাগিও একসময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এমন সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন জেলেনস্কি।

শেষে তিনি বলেন— “দিন দু’দিন পর কী হবে কেউ বলতে পারে না। আলোচনাটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে, সেটাও অনিশ্চিত।”

ইএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
২৪ ঘণ্টায় ২৬ জন আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার Dec 18, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে এক ফ্রেমে মৌসুমী-শাবনূর! Dec 18, 2025
img
তাইওয়ানে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প Dec 18, 2025
img
স্লোগানে নাম ব্যবহারের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানালেন লুৎফুজ্জামান বাবর Dec 18, 2025
ফেনীতে গভীর রাতে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন Dec 18, 2025
img
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মির্জা ফখরুল Dec 18, 2025
img
হাদির চিকিৎসা তদারকি করতে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলো পররাষ্ট্র কর্মকর্তাকে Dec 18, 2025
img
রাজনীতি না বদলালে জনগণের ভাগ্য বদলাবে না: মাহমুদুর রহমান মান্না Dec 18, 2025
img
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ২৫ ডিসেম্বর দেশে আসছেন তারেক রহমান Dec 18, 2025
img
নিজের রাগের কথা অকপটে স্বীকার করলেন সানি দেওল Dec 18, 2025
img
রিশাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও হেরেছে তার দল Dec 18, 2025
img
ভোটের মাঠে ৫ দিন নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী Dec 18, 2025
img
থানায় ঘুমন্ত পুলিশের সঙ্গে গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার সেলফি, ফেসবুকে পোস্ট Dec 18, 2025
img
২১ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা পর্যালোচনায় সভায় বসছে ইসি Dec 18, 2025
img
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কড়া বার্তা ওসমান হাদির বোনের Dec 18, 2025
img
বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে ঢাকায় আসবেন তারেক রহমান, যাবেন এভারকেয়ারে Dec 18, 2025
img
বাবার সঙ্গে সর্বশেষ কী কথা হয়েছিল এনসিপি নেত্রী জান্নাতারা রুমীর Dec 18, 2025
img
কম্বোডিয়ার ক্যাসিনো হাবে হামলা করেছে থাইল্যান্ড Dec 18, 2025
img
গোপনে ঢাকায় কনসার্ট করছেন আতিফ আসলাম! Dec 18, 2025
img
আবারও দলের প্রধান নির্বাচিত হলেন নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী অলি Dec 18, 2025