রাজশাহীতে বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পূর্ব ঘটনার জেরে এক ব্যবসায়ীর দোকানে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই ঘটনার জেরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতাকেও মারধর করা হয়েছে। ওই নেতাকে মারধর থেকে রক্ষা করতে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কাটাখালী বাজারে গিয়ে দোকানপাট তালাবদ্ধ দেখা গেছে। বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে জেলার পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার দেওয়ানপাড়া মোড়ে এনসিপি নেতার ওপর হামলা হয়। আর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পৌর এলাকার কাটাখালর বাজারে ব্যবসায়ী আবদুস সালামের দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় দুপুরের পর কাটাখালী পৌরসভা বাজারের ১ হাজারের বেশি দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
হামলার শিকার নাহিদুল ইসলাম (সাজু) এনসিপির রাজশাহী জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার আহ্বায়কও। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী।
সাজুর বাবা নজরুল ইসলাম কাটাখালী বাজার সমিতির সভাপতি। ভাঙচুরের শিকার দোকানদারের নাম আব্দুস সামাদ। তার বাড়ি চারঘাট উপজেলার বেলঘড়িয়া এলাকায়। এটি কাটাখালী পৌরসভা ঘেঁষা একটি গ্রাম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাটাখালী পৌর এলাকার শ্যামপুরে রয়েছে বালুমহাল। এই বালুমহাল থেকে বালু তোলে ট্রাকগুলো বেলঘড়িয়া হয়ে চারঘাটের বিভিন্ন এলাকায় যায়। রাত-দিন ট্রাক যাওয়াতে এলাকাবাসী এতে আপত্তি জানায়। দোকানি ও ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের বড় ছেলে মো. সজলের সঙ্গে বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। এর জেরে শুক্রবার পৌর এলাকায় আব্দুস সালামের দোকানে হামলা চালানো হয়।
এ সময় ওই ব্যবসায়ীর ছোট ছেলে মো. শিমুল দোকানে ছিলেন। এরপর ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে পৌর এলাকায় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ এসে তাদের অনুরোধ করে সরিয়ে দেন। এতে করে ১৫-২০ মিনিট পরে রাজশাহী-নাটোর সড়কে আবার যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এরমধ্যে পৌর এলাকার পশ্চিম দিকে দেওয়ানপাড়া এলাকায় বালু ব্যবসায়ীদের লোকজন জড়ো হন। এনসিপি নেতা নাহিদুল ইসলাম সেদিকে গিয়ে ঘটনাটি মীমাংসা করতে চান। তার সঙ্গে পুলিশও ছিল। পুলিশের সামনেই তার ওপর হামলা করা হয়। এ সময় তাকে রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশের কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এনসিপি নেতা নাহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি সেখানে পরিস্থিতির খোঁজখবর নিতে ও ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলেন। এ সময় বিএনপির মামুন ও বালুমহালের ইজারাদার শিহাব নামের দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন উপস্থিত ছিলেন। তারা পুলিশের উপস্থিতিতে তার ওপর হামলা চালায়। আহত হয়ে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আট নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন।
ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের ছেলে শিমুল জানান, বালুঘাটের ইজারাদার শিহাবের লোকজন এসে দোকানে হামলা চালায়। তারা তার ওপর হামলা করে। তার বড়ভাইয়ের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। তিনি মারধরের শিকার হবেন, এটা ভাবতে পারেননি। তিনি বলেন, আমার কোনো অভিযোগ নেই। বাজার সমিতির নেতারা যে মিমাংসা করে দেবে, আমি তা মেনে নেব।
এ ব্যাপারে শ্যামপুর বালুঘাটের ইজারাদার শাহিনুর রহমানকে (শিহাব) বলেন, বালুঘাট থেকে বালু উত্তোলন করে বেলঘড়িয়া দিয়ে যাওয়ার পথে সজল নামে এক ছেলে বাধা দিয়ে আসছিল।
ট্রাক প্রতি তিনি টাকাও তুলছিল। গতকাল তাদের কিছু লোক ওই এলাকায় গেলে, তাদের ওপর হামলা করে। এতটুকুই ঘটনা। আজকে দোকানে হামলা আমরা করেননি। দেওয়ানপাড়া মোড়েও আমাদের কোনো লোকজন ছিল না। সেখানে ব্যবসায়ীদের আরেকটি পক্ষ ছিল।
তিনি আরও বলেন, এনসিপির নেতার বাবা ব্যবসায়ীদের সভাপতি। তার শ্যামপুরের অর্ধেক ব্যবসায়ী কাটাখালী বাজারে ব্যবসা করেন। যখন দোকানপাট বন্ধ করার ঘোষণা আসে। তখন শ্যামপুরের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করতে চাননি। তখন এটা নিয়ে ঝামেলা হয়ে থাকতে পারে।
রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক রাজু আহমেদ মামুনকে মুঠোফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মতিহার জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আল মামুন বলেন, গত দুই দিন ধরে বালুর ট্রাক চলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। আজ এক পক্ষ আরেক পক্ষের দোকানে হামলা করলে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
তিনি বলেন, এনসিপি নেতা নাহিদ মূলত মীমাংসার জন্য সরল মনে সেখানে এসেছিলেন। তিনি বলছিলেন, ভাই আমরা আলোচনা করে সমাধান করি। কিন্তু অপর পক্ষ তার ওপর চড়াও হয় এবং মারধর শুরু করে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে গেলে আমাদের এসি, ওসি ও ইন্সপেক্টরসহ কয়েকজন সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেহেতু পুলিশের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে এবং পুলিশ সদস্যদের গায়েও হাত পড়েছে, তাই এ বিষয়ে অবশ্যই কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরপি/টিকে