দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামাতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী মৌখিকভাবে তার আহ্বানে সাড়াও দিয়েছেন, তবে তারপরও সংঘাত এখনও অব্যাহত আছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে।
গতকাল শুক্রবার রাতে আনুতিন চার্নভিরাকুল এবং হুন মানেতের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় ট্রাম্পের। দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেন, “থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আনুতনি চার্নভিরাকুল এবং কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতের সঙ্গে টেলিফোনে খুব চমৎকার আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ দুর্ভাগ্যজনকভাবে হঠাৎ উসকে ওঠায় আমি উদ্বিগ্ন। তবে তারা উভয়েই পুরোনো শান্তি চুক্তি মেনে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে যেতে সম্মত হয়েছেন। চুক্তিটি আমার এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছিল এবং উভয়েই তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এবং কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা পর দুই দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। উভয় দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে সংঘাত এখনও চলমান আছে এবং এজন্য পরস্পরকে দোষ দিয়েছেন তারা।
কম্বোডিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, “থাই বাহিনী বোমাবর্ষণ থামায়নি এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে।”
থাই সেনাবাহিনীর মুখপাত্ররাও প্রায় একই অভিযোগ করেছেন কম্বোডীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। এক মুখপাত্র বলেছেন, “কম্বোডীয় সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকজনকে নিজেদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে এবং সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ল্যান্ডমাইন পাতছে।”
সীমান্তবর্তী এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল বা পান্না ত্রিভূজ নামে ৮০০ বর্গকিলোমিটারের একটি ভূখণ্ডের মালিকানা নিয়ে ১১৫ বছর ধরে বিবাদ চলছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে। উভয় দেশই এই ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে।
দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে সংঘাত চলার পর ১৫ বছর আগে প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে যায় থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া। কিন্তু ২০২৪ সালের মে মাস থেকে এ ইস্যুতে ফের উত্তেজনা শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে। এই উত্তেজনার জের ধরে গত জুলাই মাসের শেষ দিকে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে থাই ও কম্বোডীয় সেনাবাহিনী। ৫ দিনের সেই সংঘাতে নিহত হয়েছিলেন দুই দেশের ৪৮ জন নাগরিক এবং বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানের উদ্দেশে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন ৩ লাখ মানুষ। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ, ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে পুরোনো সেই সমঝোতার বিষয়টিই উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর শনিবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। দপ্তরের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, “কম্বোডিয়ার সঙ্গে আমাদের কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি।”
কাছাকাছি ফেসবুক পোস্টে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত দাবি করেছেন, তার দেশ সবসময় শান্তি বজায় রাখতে আগ্রহী এবং যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তার দায় সম্পূর্ণ থাইল্যান্ডের।
সূত্র : রয়টার্স
আরপি/টিকে