সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বেশ রহস্যজনক এক চরিত্র। মাঠের ক্রিকেটে সাকিব যতটা খ্যাতি কুড়িয়েছেন, মাঠের বাইরে যেন ততটাই হয়েছেন বিতর্কিত, সমালোচিত।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য হন সাকিব। তবে বেশি দিন টেকেনি সেই পদ। ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে। ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে সরকারের। পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরাচারী এবং ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী শেখ হাসিনা।
শান্তিতে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই সরকারের অধীনেই চলছে দেশের সব কাজ। এই সরকারে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। জুলাই বিপ্লবে সামনের সারির একজন নেতৃত্বদানকারী ছিলেন আসিফ।
২০২৪ সালের ভারত সফরে নিজের অবসরের পরিকল্পনা জানিয়েছিলেন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট খেলেই টেস্টকে বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন সাকিব। তার ফেরা প্রসঙ্গে অনেক আয়োজন এবং প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছিল। যদিও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাকিবের আর দেশে ফেরা হয়নি। বিসিবিকে এই ব্যাপারে সাকিবকে দেশে না আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন তখনকার ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফই।

সাকিবের দেশে না ফেরায় আসিফের নির্দেশই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি নিয়ে নানা সময়ে ছোটখাটো বক্তব্য দিয়েছেন আসিফ। এবার জানিয়েছেন বিস্তারিত ঘটনা। সাকিব প্রসঙ্গে এক পডকাস্টে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘প্রথম দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দায়িত্বে আসে, বিসিবির কয়েকজন উদ্যোগ নিয়েছিলেন (সাকিবকে ফেরানোর), যারা সাকিব আল হাসানকে পছন্দ করেন, যারা চাচ্ছিলেন, তারা আমাকেও বলেছিলেন (এই ব্যাপারে)। তারা আমাকেও বলেছিলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের সাথে থাকা, গণহত্যার দায়, এসব থেকে বের হয়ে আসার উপায় বের করতে চেয়েছিলেন, এর অংশ হিসেবে সাকিব আল হাসানকে অ্যাপ্রোচও করেছিলেন। যে ক্ষমা চেয়ে, এই গণহত্যার ব্যাপারে উনি কোন সাইডে আছেন এটা ক্লিয়ার করা। একটা উদ্যোগ সিনিয়রদের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল। তবে শেখ হাসিনার জন্মদিনে (সাকিব পোস্ট করে শুভেচ্ছা জানানোয়) এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে উনি (সাকিব) কোন সাইডে আছেন।’
পরে সাকিবকে আর জাতীয় দলে না খেলানোর নির্দেশও বিসিবিকে দিয়ে রাখেন আসিফ। পডকাস্টে আসিফ বলেছেন, ‘অনেকে এটা বলবে হয়ত যে এটা পেশাদার না বলা যে, সাকিব আল হাসানকে খেলতে দেওয়া হবে না। কিন্তু যখন আমার শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা হয়, যখন অই ২ বছরের বাচ্চার সাথে দেখা হয় যার বাবা আসলে মারা গেছে, তাকে যে খুন করেছে, শেখ হাসিনা যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এটা এখন আদালতে প্রমাণিত, আমরা ভয়েস রেকর্ড পেয়েছি গুলি করার নির্দেশ দেওয়ার। এই লোকটাকেই যে এখন তার নেতা হিসেবে মানছে, এই বীভৎস হত্যাকারীকে, তাকে আবার বাংলাদেশের মাটিতে খেলার সুযোগ করে দেওয়া মানে অই বাচ্চার প্রতি অন্যায় যার বাবা মারা গিয়েছে, অই বাবা-মার প্রতি অন্যায় হয়ে যাবে যার ছেলে মারা গিয়েছে। বাংলাদেশের আরও কোটি কোটি মানুষের প্রতি অন্যায় করা হবে। যারা গত ১৬-১৭ বছর ধরে অত্যাচারের শিকার হয়েছে।’
ক্রিকেটের সব ব্রেকিং নিউজ পেতে যোগ দিন হোয়াটসঅ্যাপে
আসিফ আরও বলেন, ‘এ কারণে আমরা একটি উদ্যোগ নিলাম, খেলোয়াড়দের রাজনৈতিক প্রচারণা থেকে বিরত রাখার ব্যাপারে। আমরা চাই না যে আমাদের আর কোনো প্রতিভা সাকিব আল হাসানের মত হয়ে যাক, আমাদের আর কোনো প্রতিভার গায়ে রক্ত লাগুক।’
কিছুদিন আগে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার পদ থেকে সরে গেছেন আসিফ মাহমুদ। নতুন ক্রীড়া উপদেষ্টা হয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
টিজ/টিএ