বারবার তফসিল পরিবর্তন ও পদত্যাগের ঘটনায় স্থবির ব্রাকসু

বারবার তফসিল পরিবর্তন এবং পদত্যাগের ঘটনায় স্থবির হয়ে পড়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ব্রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন এবং সর্বশেষ আমরণ অনশনের পর গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে শিক্ষার্থী সংসদ যুক্ত হয়। এরপর মঙ্গলবার ৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক ড. ফেরদৌস রহমানকে প্রধান কমিশনার করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট ব্রাকসুর প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। তবে একদিন পরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করলে নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়।

পরে ১১ নভেম্বর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ১১৭তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজামানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিশন পুনর্গঠন করা হয়।

কমিশন পুনর্গঠন হলেও কমিশনকে কার্যত নীরব ভূমিকায় দেখা যায়। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১৮ নভেম্বর তড়িঘড়ি করে ২৯ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে ব্রাকসুর প্রথম তফসিল প্রকাশ করা হয়। তবে একদিন পরই (২০ নভেম্বর) ভোটগ্রহণের তারিখ পরিবর্তন করে ২৪ ডিসেম্বর নির্ধারণ করে দ্বিতীয় তফসিল ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৫ নভেম্বর পুনর্গঠিত কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. শাহজামান প্রথমবারের মতো পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে পরবর্তীতে প্রশাসনের অনুরোধে তিনি আবার দায়িত্ব পালনে সম্মত হন।

এরপর ১ ডিসেম্বর বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অসংগতি থাকার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশন অনির্দিষ্টকালের জন্য সব কার্যক্রম স্থগিত করে। পরে ৩ ডিসেম্বর রাতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নতুন রোডম্যাপ অনুযায়ী সংশোধিত তৃতীয় তফসিল ঘোষণা করা হয়।

তফসিল অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন, ডোপ টেস্ট রিপোর্ট সংগ্রহসহ সব কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন (৯ ডিসেম্বর) কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়াই নির্বাচন কমিশন কার্যত উধাও হয়ে যায়। এতে প্রার্থীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন।

পরে ১০ ডিসেম্বর রাতে আবারও তফসিল পরিবর্তন করে ২৪ ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী বছরের ২১ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে চতুর্থ তফসিল প্রকাশ করা হয়। এর পরদিন ১১ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. শাহজামান দ্বিতীয়বারের মতো পদত্যাগপত্র জমা দেন।

সর্বশেষ তফসিল অনুযায়ী গতকাল ১৩ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যতীত বাকি পাঁচ কমিশনারের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিত প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়- দুঃখজনকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো লিখিত নির্দেশনা বা দায়িত্ব অর্পণ ছাড়াই তার পদত্যাগ সংক্রান্ত একটি তথ্য আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পেরেছি। পাশাপাশি, বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কোনো মাধ্যমেই যোগাযোগ স্থাপন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা অত্যন্ত বিব্রত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নির্বাচন সংক্রান্ত বিধি ও আইনগত কাঠামো অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অনুপস্থিতিতে বা আনুষ্ঠানিক দিকনির্দেশনা ব্যতীত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশসহ গুরুত্বপূর্ণ কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা আইনসম্মত নয়। ফলে নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে নির্ধারিত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশে সাময়িক বিরতি রাখতে বাধ্য হয়েছে।

কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী আহমাদুল হক আলবীর বলেন, শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতির গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো ব্রাকসু। কিন্তু যখনই শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে প্রশাসনের কাছে গিয়েছে, তখনই প্রশাসন নানা অজুহাত দেখিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে সার্কাজমের এক অনন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে তিনবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ এবং চারবার তফসিল পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রশাসন নিজেদের চরম হাস্যরসের পাত্রে পরিণত করেছে। তারা যদি একটি সাধারণ ব্রাকসু নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা না রাখে, তবে কীভাবে এত বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা সত্যিই চিন্তার বিষয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেন পদত্যাগ করছেন, সেটি আমার নিজেরও প্রশ্ন। পদত্যাগ যেন একপ্রকার খেলায় পরিণত হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমরা শিক্ষার্থীদের জন্যই কাজ করব- এটাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হওয়া। সেই জায়গায় যদি আমরা না পৌঁছাতে পারি, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য আমরা সবসময়ই প্রস্তুত।

আরপি/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সৌদিতে এক সপ্তাহে প্রায় ২০ হাজার প্রবাসী গ্রেপ্তার, ফেরত পাঠানো হলো ১২,৩৬৫ জনকে Dec 15, 2025
img
বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, চবি উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি ছাত্রদলের Dec 15, 2025
img
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে সকল অপশক্তি পরাস্ত হবে : ইশরাক Dec 15, 2025
img
বৈজ্ঞানিকভাবে মাছ চাষ খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার Dec 15, 2025
img
সিলেটে আওয়ামী লীগের ৬ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Dec 15, 2025
img
খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ গেল যুবকের Dec 15, 2025
img
আমরা ভালো করেই জানি কারা বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়েছিল: মির্জা ফখরুল Dec 15, 2025
img
তারেক রহমান লন্ডনে আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন ১৬ ডিসেম্বর Dec 15, 2025
img
নাশকতা মামলায় যমুনা অয়েলের সিবিএ নেতা কারাগারে Dec 15, 2025
img
কুমিল্লায় নাশকতার মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার Dec 15, 2025
img
পেশাজীবীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাইলেন তারেক রহমান Dec 15, 2025
img
ওমরাহ করানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভোট চাচ্ছেন জামায়াত প্রার্থী, ভিডিও ভাইরাল Dec 15, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সৈকতে হামলায় প্রাণ গেল ১২ জনের, হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ Dec 15, 2025
img
৮ হাজার ৫০১টি পদ সংরক্ষণের নির্দেশ হাইকোর্টের Dec 15, 2025
img
বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের অঙ্গীকার অটুট থাকবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 15, 2025
img
হাদির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের ডাক সাদিক কায়েমের Dec 14, 2025
img
নারায়ণগঞ্জে জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের তোপের মুখে সাবেক ওসি, ছাড়াল বিএনপিপন্থীরা Dec 14, 2025
img
ব্যাটে-বলে প্রোটিয়াদের উড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত Dec 14, 2025
img
হাদির ঘটনায় ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও ৩ জন আটক Dec 14, 2025
img
বছরের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি শাকিব খানের সিনেমা করা: সাবিলা Dec 14, 2025