আমরা ভালো করেই জানি কারা বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়েছিল: মির্জা ফখরুল

একাত্তরে ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির’ পরিকল্পনাতেই যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল, সে কথা তুলে ধলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা কারা, দেশের মানুষ তা জানে।

রোববার বিকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “বুদ্ধিজীবী দিবসটি আমাদের কাছে খুব ভারাক্রান্ত। কারণ স্বাধীনতা পাওয়ার ঠিক দুই দিন আগে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, একটা নীল নকশার মাধ্যমে, একটা জাতিকে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত ছিল সেটা।

“দুর্ভাগ্য আমাদের যে, যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সেদিন যোগসাজশ করেছিল, তাদের প্রতিনিধি হয়ে এসে বাড়িতে বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে অথবা তাদের বাড়ি থেকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল কিন্তু বাঙালি সন্তান। আজকে আমরা খুব ভালো করে জানি যে, তারা কারা ছিলেন?”

ফখরুল বলেন, “আমাদের ইতিহাস প্রমাণ করে, তখনকার সেই রাজনৈতিক শক্তি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তারাই সেদিন আমাদের সেই সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই।

“কারণ বারবার এই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র হয়েছে, বারবার এই দেশের মানুষের ওপরে আঘাত এসেছে এবং তারা যেন মেধার ভিত্তিতে জেগে উঠতে না পারে, যেন তারা জ্ঞানে বিজ্ঞানে উপরে উঠতে না পারে, শিক্ষায় দীক্ষায় জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে না পারে, সেই চেষ্টাটা তখন করা হয়েছে।”

আওয়ামী লীগের ১৫ বছর ‘একই ঘটনা ভিন্ন অঙ্গিকে’ ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল হয়েছে, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে ফেলা হয়েছে। আমরা সবসময় এই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আমাদের এই জাতির বিরুদ্ধে আমরা দেখছি।”

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্মরণে বিএনপির উদ্যোগে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা হয়।

‘ওরা ভয় পাইয়ে দিতে চায়’

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে নির্বাচনের তফসিল যখন ঘোষণা করা হল, তখনই হত্যা করার চেষ্টা করা হল হাদিকে (শরীফ ওসমান বিন হাদি) … একজন সৈনিক, যে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। একটা ভয় আবার শুরু করতে চেয়েছে যে ভয় ১৫ বছর আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে।

“ভয় দেখিয়ে গিয়ে শাসন করার চেষ্টা করেছে, ত্রাস সৃষ্টি করেছে। আমাদের গণতন্ত্রের যে সৈনিক, তাদেরকে তারা ভয় দেখিয়ে স্তব্ধ করে দিতে চায়।কিন্তু ইতিহাস বলে যে ভয়ে বিএনপি কখনো দমে যায় না। আমরা দমে যাব না।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা তারেক রহমান সাহেবের যে স্বপ্ন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে স্বপ্ন, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ার যে স্বপ্ন, সত্যিকার অর্থেই একটি সুখী সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবার সেই স্বপ্নকে আমরা অবশ্যই বাস্তবায়িত করব ইনশাল্লাহ।”

যত ‘ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত’ হোক না কেন, ‘মাথা উঁচু করে’ দাঁড়িয়ে থাকার প্রত্যয় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “সে জয় লাভ করবেই ইনশাল্লাহ, সে বিশ্বাস আমাদের আছে।

“বিএনপি একটা উদারপন্থি গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”

‘বিএনপি প্রতিরোধ করবে’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “যে ঘটনাটি ঘটল একজনকে গুলি করার… এ ধরনের কাজ যারা করে একটি চিহ্নিত একটি দল, এই ধরনের অপকর্ম যারা করে তারা চিহ্নিত দল … এই দলটি বাংলাদেশকে কখনোই শান্তিতে থাকতে দেবে না।

“তবে বিএনপি সকল হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করবে। আপনারা ভাববেন না আমরা নীরব আছি, নীরব থাকব। তার অর্থ এই না আঘাত এলে আমরা আপনাদেরকে সালাম দিয়ে চলে যাব। এই কথা ভাবার সুযোগ নেই।”

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বক্তব্য দেন।

ইএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জামায়াতের যুব ম্যারাথনে লাখো নেতাকর্মীর ঢল Dec 16, 2025
img
বিজয় দিবস নিয়ে মোদির পোস্টে উল্লেখ নেই বাংলাদেশের নাম Dec 16, 2025
img
যে তথ্য দিলেন হাদির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সালের স্ত্রী ও প্রেমিকা Dec 16, 2025
img
মিথ্যা ইতিহাস রচনা করে মূল্যায়ন করা হয়নি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের: জামায়াত আমির Dec 16, 2025
img
মহান বিজয় দিবসে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানাল চীন Dec 16, 2025
img
রেস্তোরাঁ ‘বাস্তিয়ানের’ জন্য ফের আইনি জটিলতায় অভিনেত্রী শিল্পা শেট্টি Dec 16, 2025
img
আজ আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত হবে আইপিএলের মিনি অকশন Dec 16, 2025
img
জাতীয় দিবসগুলো আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে : ঢাবি ভিসি Dec 16, 2025
img
বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে বিজিবি মহাপরিচালকের শ্রদ্ধা Dec 16, 2025
img
বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ হওয়া নিয়ে শোয়েব আখতারের মন্তব্য Dec 16, 2025
img
ওয়াংখেড়েতে মেসিকে দাঁড় করিয়ে সংবর্ধনা, রোষের মুখে ২ অভিনেতা Dec 16, 2025
img
আজ বিকেলে গুলশানে উদ্বোধন হচ্ছে বিএনপির নির্বাচনি কার্যালয় Dec 16, 2025
img
প্রথম আইবুড়ো ভাত খেলেন মধুমিতা-দেবমাল্য! Dec 16, 2025
img
সিরাজগঞ্জে বিরল প্রজাতির হিমালয়ান শকুন উদ্ধার Dec 16, 2025
img
সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার জন্য খুলে দেওয়া হলো জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটক Dec 16, 2025
img
জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা নিবেদন Dec 16, 2025
img
ভারতে ঘন কুয়াশায় ১০ গাড়ির সংঘর্ষ, প্রাণ হারাল ৪ Dec 16, 2025
img
নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নিরাপত্তা সতর্কতা Dec 16, 2025
img
সিডনির বন্ডাই বিচে হামলাকারীদের আইএসের সঙ্গে যোগ থাকতে পারে : অ্যান্থনি আলবানিজ Dec 16, 2025
img
নতুন ধারায় রাজনীতি শুরু করতে চাই: জামায়াত আমির Dec 16, 2025