কলকাতার বিনোদন মানচিত্রে ফের ব্যস্ত সময় আসতে চলেছে। তবে সেই উন্মাদনার ছায়ায় এবার ঘনিয়ে উঠেছে নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবনার মেঘ। লিয়োনেল মেসির সাম্প্রতিক কলকাতা সফর ঘিরে যে বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্কের অভিজ্ঞতা শহর দেখেছে, তার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে দুটি বড় আয়োজন অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান এবং বিশ্বখ্যাত সেতারশিল্পী অনুষ্কা শঙ্করের অনুষ্ঠান।
দীর্ঘ তেরো বছর পর আবার কলকাতায় পা রাখছেন এ আর রহমান। আগামী ১১ জানুয়ারি শহরে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার সংগীতানুষ্ঠান করবেন তিনি। তার ঠিক পরের মাসেই কলকাতায় আসার কথা অনুষ্কা শঙ্করের। তিনিও এই শহরে শেষবার অনুষ্ঠান করেছিলেন তেরো বছর আগে। ফলে শীতের কলকাতায় যে আবারও মানুষের ঢল নামবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
কিন্তু মেসির অনুষ্ঠানে ভিড় সামলাতে না পারার যে ভয়াবহ চিত্র সামনে এসেছে, তার পর রহমান ও অনুষ্কার অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে রহমানের অনুষ্ঠান নিয়ে উদ্বেগ নতুন নয়। অতীতে তামিলনাড়ুতে তাঁর একটি অনুষ্ঠানে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছিল, যা আজও অনেকের মনে দাগ কেটে আছে।
রহমানের অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থার এক উচ্চপদস্থ কর্মীর কথায়, এই ধরনের আন্তর্জাতিক মানের শিল্পীর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিকল্পনা শুরু হয় বিমানবন্দর থেকেই। শিল্পী শহরে পা রাখার মুহূর্ত থেকে মানবশৃঙ্খল তৈরি করে তাঁকে গাড়িতে তোলা, হোটেলে পৌঁছনো, সেখান থেকে অনুষ্ঠানস্থলে যাতায়া প্রতিটি ধাপে থাকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন। অনুষ্ঠানস্থলে দর্শকাসনকে একাধিক ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ব্লকে আলাদা করে নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়, যাতে এক অংশের দর্শক অন্য অংশে ঢুকে পড়তে না পারেন।
শোনা যাচ্ছে, নিউ টাউনের অ্যাকোয়াটিকা ময়দানে হতে পারে রহমানের অনুষ্ঠান, যেখানে প্রায় দশ হাজার দর্শক বসার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি অংশে থাকবেন একাধিক বাউন্সার, সঙ্গে থাকবে ডবল ব্যারিকেড। মঞ্চের সামনে ও পিছনে, সাজঘর, শিল্পীর গাড়ি প্রবেশের রাস্তা সব জায়গাতেই নজরদারি থাকবে কড়া।
মেসির অনুষ্ঠানে দর্শকদের ক্ষোভ থেকে জলের বোতল ছোড়ার ঘটনার পর এবার আরও এক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাঠের ভিতরে কেবল কাগজের গ্লাস ব্যবহার করা হবে, যাতে কোনও কঠিন বস্তু দর্শকের হাতে না আসে। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে প্রায় একশ থেকে একশ কুড়ি জন নিরাপত্তাকর্মী থাকবেন বলে জানা যাচ্ছে, যাঁদের প্রত্যেক দশ জনের জন্য থাকবেন একজন তদারকি কর্মকর্তা।
অন্যদিকে অনুষ্কা শঙ্করের অনুষ্ঠান নিয়েও নিরাপত্তা সংস্থাগুলি নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। মেসির ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সব আসনের টিকিট বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। ভিড় নিয়ন্ত্রণই যে এবার প্রধান অগ্রাধিকার, তা স্পষ্ট।
সব মিলিয়ে, মেসির ঘটনার পর কলকাতা যেন নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি। রহমান ও অনুষ্কার মতো শিল্পীদের অনুষ্ঠানে শুধুই সুরের আবেশ নয়, নিরাপত্তার আঁটসাঁট বেষ্টনীও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ, তা এবার চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চলেছে শহর।
এমকে/এসএন