দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য বাসভবন ও দাপ্তরিক কার্যক্রমের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরে গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন। ওই বাড়ির পাশেই ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় বসবাস করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তারেক রহমানের জন্য আলাদা একটি কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি গুলশানে আরও একটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি নম্বর নতুন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ‘আমার ভাবনায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে জাতীয় রিল-মেকিং প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেন তার উপদেষ্টা মাহাদী আমিন।
আগামী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরছেন তারেক রহমান। তার সঙ্গে থাকবেন তার কন্যা জাইমা রহমান। দলের শীর্ষ নেতার আগমনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সেদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেতা-কর্মীরা তাকে সংবর্ধনা জানাতে উপস্থিত থাকবেন। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার আগে লন্ডনে যাবেন তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশবাসী দীর্ঘদিন ধরে আমাদের নেতার অপেক্ষায় রয়েছে। তার আগমন উপলক্ষে দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীরা সুশৃঙ্খলভাবে সড়কের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। সেই প্রস্তুতির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তারেক রহমানকে বরণ করে নেওয়ার সার্বিক পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িটিই নির্ধারণ করা হয়েছে তারেক রহমানের বাসভবন হিসেবে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বাড়িটি খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ৫ জুন বাড়িটির দলিল আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়িটির সংস্কার কাজ চলছে। সীমানা প্রাচীর ও ভেতরের অংশে নতুন করে রঙ করা হয়েছে, দরজা-জানালা পাল্টানো হচ্ছে। সামনে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা ছাউনি ও সিসিটিভি ক্যামেরা। সংস্কার শেষ হলে নতুন ফার্নিচার দিয়ে সাজানো হবে বাসভবনটি। নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, তারেক রহমানের বসবাসের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তার কক্ষের পাশেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য নতুন কক্ষ তৈরি করা হয়েছে, যা আগে মহাসচিব ব্যবহার করতেন। কার্যালয়ের প্রধান ফটক সংস্কার করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তার জন্য আলাদা কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার জানান, গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কক্ষের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।
গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি নম্বর ভবনটি নতুন অফিস হিসেবে ভাড়া নিয়েছে বিএনপি। চারতলা এই ভবনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দোতলায় রয়েছে ব্রিফিং রুম, অন্য তলাগুলোতে বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বসার ব্যবস্থা ও গবেষণা সেল।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শাইরুল কবির খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যারা মাঠে কাজ করছেন, তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কবে তারেক রহমান দেশের মাটিতে পা রাখবেন। আমাদের সব প্রস্তুতি তাকে কেন্দ্র করেই। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
নতুন অফিস উদ্বোধনের পর আয়োজিত প্রথম সংবাদ সম্মেলনে মাহাদী আমিন বলেন, এটি বিএনপির একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়। এখান থেকেই নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তিনি আরও বলেন, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল আগ্রহ ও আবেগ তৈরি হয়েছে।