অস্থির বিশ্বে বিচার বিভাগের স্থিরতা, সংযম, সততা ও সাহসই জাতির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থিতিশীলতার উৎস হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব সংবিধানকে উল্টে দেওয়ার প্রস্তাব করেনি, বরং এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শুদ্ধ করার প্রস্তাব করেছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। আপিল বিভাগে অনুষ্ঠিত বিদায় সংবর্ধনায় সুপ্রিম কোর্ট আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
গত বছর ১০ আগস্ট দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পান সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আগামী ২৭ ডিসেম্বর তিনি অবসরে যাবেন। ওই দিন তাঁর ৬৭ বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে বার্ষিক ছুটি থাকার কারণে গতকালই ছিল তাঁর বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস। রীতি অনুযায়ী এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বক্তব্য দেন। এ সময় আইনজীবীদের উপস্থিতিতে আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষ পরিপূর্ণ ছিল।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধান পরিবর্তনকে হুমকি হিসেবে নয়, বিচার বিভাগকে তা গণতান্ত্রিক সত্য হিসেবে নিতে হবে। আমরা একসঙ্গে দেশের বিচারিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করেছি। গত ১৬ মাসে আপনারা যে সহযোগিতা আমাকে করেছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সুপ্রিম কোর্ট বার ও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, পারস্পরিক সম্মান, অভিন্ন দায়িত্ব এবং সংবিধানের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আমরা আবারও নিশ্চিত করছি, আমাদের বিচার বিভাগের শক্তি কোনো একটি পদে নয়, বরং সততা, ভারসাম্য ও দূরদর্শিতার সঙ্গে ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যে নিহিত।
অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “প্রধান বিচারপতি হিসেবে স্বল্প সময়ের এই মেয়াদে আপনি আপনার প্রজ্ঞা, মেধা ও দূরদর্শিতা দ্বারা স্থাপন করেছেন এক অনন্য বিচার বিভাগীয় মানদণ্ড, যাকে আমি নাম দিয়েছি ‘দ্য রেফাত স্ট্যান্ডার্ড’, যা বিচারিক সাহসিকতার এবং পরম স্বচ্ছতার মূর্ত প্রতীক।”
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আপনি নাগরিকদের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
মামলা পরিচালনায় দীর্ঘসূত্রতা দূর করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অব্যাহত রেখেছেন। সমাজের সকল স্তরে বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে আপনি ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী।’
আইকে/এসএন