ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর প্রতিবাদে নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে জুমার নামাজের পর শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে জেলখানা মোড়ে অবস্থান নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। তারা মহাসড়কে ইট ও কাঠ ফেলে এবং টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা আড়াইটা থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই মহাসড়কে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার পর বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নিলে পুনরায় যান চলাচল শুরু হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জামায়াত-শিবির, এনসিপিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই অবরোধে অংশ নেন। অবরোধের ফলে মাধবদী, শেখেরচর, পাঁচদোনা মোড়, সাহেপ্রতাব, ভেলানগর ও ইটাখোলাসহ ঢাকা-সিলেট সড়কের নরসিংদী অংশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
অবরোধ চলাকালে বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। আন্দোলনকারীদের হ্যান্ড মাইকে ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা—ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘শহীদ হাদীর রক্তে কেনা—দেশটা কারো বাপের না’, ‘আমার ভাই কবরে—খুনি কেন বাইরে’, ‘একটা একটা লীগ ধর—ধইরা ধইরা জবাই কর’সহ বিভিন্ন উত্তেজক স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আন্দোলনকালে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য, নরসিংদী জেলা’ ব্যানারে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
দাবিগুলো হলো—
দ্রুত সময়ের মধ্যে হাদীর হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
যতদিন পর্যন্ত বিচার না হবে, ততদিন ভারতীয় হাইকমিশন বন্ধ রাখতে হবে।
শাহবাগ চত্বরকে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ ঘোষণা করতে হবে।
সরকারিভাবে সারা দেশে ‘ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
শহীদ ওসমান হাদিকে ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করতে হবে।
আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী ১৪ দলকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং কোনো প্রকার রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না।
সব খুনি আওয়ামী সন্ত্রাসীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।
প্রশাসনের সর্বস্তরে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী সন্ত্রাসী ও ভারতীয় দালালদের অপসারণ করতে হবে।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
জেলখানা ভাঙার মামলায় আন্দোলনকারীদের নাম বাদ দিতে হবে।
এ ছাড়া, আওয়ামী লীগ নেতাদের মামলায় কোনো আইনজীবী যেন না দাঁড়ান এবং কোনো বিচারপতি যেন সুপারিশ না করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নরসিংদী জেলার আহ্বায়ক মাসুদ বিন ফরিদ আদনান বলেন, হাদি ভাইয়ের মৃত্যুর বিচারের দাবিতে আমরা সবাই রাজপথে নেমে এসেছি। আমরা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তথা ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে ১১ দফা দাবি পেশ করেছি এবং অবিলম্বে তা বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত ১২টার পর নরসিংদী শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। একপর্যায়ে নরসিংদী বাজারের সুতাপট্টি মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের আজীবন সভাপতি প্রয়াত মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়ার ম্যুরাল ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া, রাতেই শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করা হয়।
এবি/টিকে