ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর জন্য পদত্যাগ করাই হবে ‘বুদ্ধিমানের কাজ’। এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাস্পের এ বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মাদুরো। তিনি বলেন, হুমকি না দিয়ে নিজের দেশের সমস্যার দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত ট্রাম্পের।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে মাদুরো বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে নিজের দেশের দিকেই মন দিলে তিনি ভালো করতেন। বিশ্বে ভালো থাকতে চাইলে নিজের দেশের কাজই সামলানো উচিত।’
সোমবার ফ্লোরিডায় নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ১২ বছর ক্ষমতায় থাকা মাদুরো পদ ছাড়বেন কি না, তা তার নিজের সিদ্ধান্ত। তবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, সেটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।’
তিনি আরো হুঁশিয়ারি দেন, মাদুরো যদি কঠোর অবস্থান নেন তবে, সেটাই হবে তার শেষবারের মত কঠোর পদক্ষেপ।’ ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি ঘিরে দেশটির বিরুদ্ধে নৌ অবরোধ জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে, ভেনেজুয়েলার প্রধান মিত্র রাশিয়া মাদুরো সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে থাকা মস্কো এই অবস্থান নেয় মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগের দিন।
ওই বৈঠকে ভেনেজুয়েলার ক্রমবর্ধমান সংকট নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।
রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করা হয়। এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে কথিত মাদক পাচারের অভিযোগে নৌযানে হামলা ও দুটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সের্গেই লাভরভ ও ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিলের মধ্যে আলোচনায় ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পদক্ষেপ অঞ্চলের জন্য গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে এবং আন্তর্জাতিক নৌ চলাচলকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভেনেজুয়েলার নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি রাশিয়া পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
রাশিয়ার বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ করে জাতিসংঘে, উভয় দেশ সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে।
ভেনেজুয়েলার আরেক মিত্র চীনও নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার পক্ষে সমর্থন দিয়েছে। ভেনেজুয়েলার অভিযোগ, এটি ‘চলমান মার্কিন আগ্রাসন’ নিয়ে আলোচনার জন্য প্রয়োজন।
টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল জানান, তিনি ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ক্যারিবীয় অঞ্চলে সংঘটিত ‘আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এর মধ্যে রয়েছে জাহাজে হামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চালানো বেআইনি জলদস্যুতা কার্যক্রম। গিল বলেন, এসব বৈরী তৎপরতার মুখে মস্কোর ‘পূর্ণ সমর্থন’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন লাভরভ।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারিবীয় সাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে যেসব নৌযানে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে, এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এসব অভিযানে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জেলেরাও ছিলেন বলে পরিবার ও বিভিন্ন সরকার জানিয়েছে।
ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ ভেনিজুয়ায় যাতায়াতকারী ‘নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের’ বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করা হবে বলে ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের অভিযোগ, মাদুরোর অধীনে কারাকাস তেলের অর্থ ব্যবহার করছে ‘মাদক সন্ত্রাস, মানব পাচার, হত্যা ও অপহরণে’ অর্থ যোগাতে।
তিনি আরো বলেন, ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের সব তেল নিয়ে নিয়েছে। এটি দেশটির তেল খাত জাতীয়করণের প্রতি ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সেটা ফেরত চাই।’ এর জবাবে কারাকাস আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ওয়াশিংটন সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’র অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে ভেনেজুয়েলা।
সূত্র : এএফপি
এসকে/টিকে