বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রথমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গেলেন। রোববার দুপুরে সেখানে এলে জ্যেষ্ঠ নেতারা ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। এর আগেই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হন। তিনি কার্যালয়ে গেলে উচ্ছ্বসিত দেখা যায় তাদের। দলটির এই শীর্ষ নেতা এদিন জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। স্বাক্ষর করেন ঢাকা-১৭ ও বগুড়া-৬ আসনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্রে।
ওয়ান-ইলেভেনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে গুলশানের এ ভবনটি বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রোববার রাতে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে গুলশান কার্যালয়ে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছেন। যদিও দীর্ঘদিন ধরে ভার্চুয়ালি অফিসের সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন। সুতরাং এখানকার পরিবেশ সম্পর্কে তার মোটামুটি জানা আছে। প্রথম দিনে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। এরপর তার জন্য যে নির্ধারিত কক্ষটি তৈরি করা হয়েছে, সেখানে তিনি যান এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দলের কিছু কর্মসূচি সম্পর্কে কথা হয়েছে। তারপর অন্য যারা ছিলেন, পর্যায়ক্রমে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।’
ডা. পাভেল বলেন, ‘বিএনপির নির্বাচন পরিচালনায় যে কমিটি, তাদের সঙ্গেও আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করেছেন। এছাড়া নিজস্ব কিছু নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ ছিল, তাও করেছেন। ঢাকা-১৭ আসন থেকেও তারেক রহমান নির্বাচন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই আসনে নির্বাচন পরিচালনার জন্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালামকে তিনি প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী দিনে সফর পরিকল্পনা কেমন হবে, তা নিয়ে কাজ করছেন। এছাড়া সাংগঠনিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন।’
আগামী দিনে তার কী কর্মসূচি আছে জানতে চাইলে ডা. পাভেল বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের কবর জিয়ারত করতে চান। পাশাপাশি মিডিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে একটা মতবিনিময় করতে পারেন।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই অফিস যখন ভাড়া নেওয়া হয়, তখন তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে ছিলেন। ১৭ বছর পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃহস্পতিবার দেশে ফেরেন। এর আগে তার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে একটি কক্ষ প্রস্তুত করা হয়।
এদিকে তারেক রহমান গুলশান কার্যালয়ে আসবেন-এই খবরে দলীয় নেতাকর্মীসহ গণমাধ্যমকর্মীরাও ভিড় করেন কার্যালয় ও এর সামনে। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের গাড়ি গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করে। এর আগে তিনি গুলশান অ্যাভিনিউয়ের বাসভবন থেকে কার্যালয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হন। তারেক রহমানকে গুলশান কার্যালয়ে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার। এ সময় আরও ছিলেন দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, সদস্য শাম্মী আক্তার, আতিকুর রহমান রুমন, ব্যারিস্টার আবু সায়েম, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার, সিনিয়র সাংবাদিক সালেহ শিবলী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনি প্রমুখ। এছাড়াও ছিলেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. একেএম শামছুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ইউরোপের সমন্বয়ক কামাল উদ্দিন, তারেক রহমানের একান্ত সচিব আবদুর রহমান সানী প্রমুখ।
মতবিনিময় শেষে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা নির্বাচন সংক্রান্ত যেসব বিষয় আছে, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মিটিং করিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রথম অফিস করাসহ দলের সাংগঠনিক ও দেশের গণতন্ত্র এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তারেক রহমানের আগমন দলের মনোবল অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছে। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দলীয় কার্যালয়ে তারেক রহমানকে পেয়ে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন। নির্বাচন ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি যাত্রা করবেন। দেশের মানুষ যে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন, তারেক রহমানের আগমনে তা পূরণ হবে।
এদিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য একটি আলাদা কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। দোতলায় চেয়ারপারসনের কক্ষের পাশেই এই কক্ষ তৈরি করা হয়েছে।
আব্দুস সালাম ঢাকা-১৭ আসনে প্রধান সমন্বয়ক : তারেক রহমান ঢাকা-১৭ ও বগুড়া-৬ আসনে ‘ধানের শীষ’-এর প্রার্থী। রোববার সন্ধ্যায় আসন দুটির দলীয় সমন্বয়কদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। এর মধ্যে ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচন পরিচালনায় প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামকে। পরে এই আসনে নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারেক রহমান। আব্দুস সালাম ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমিনুল হক, সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল আলিম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডন যান তারেক রহমান। সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশে ফিরতে পারেননি তিনি এবং তার সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান ও মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। গত বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে সপরিবারে দেশে ফেরেন তারেক রহমান।
ইউটি/টিএ