ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দেড় মাসেরও কম সময় বাকি। এখনও বডি ক্যামেরা কেনা যায়নি। নির্বাচন স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বডি ক্যামেরা সরবরাহ করার আলোচনা চলছিল গেল কয়েক মাস ধরে। বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি নিয়ে নানা মতামত উঠে আসে। এবার ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে ক্যামেরা কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা করে সেখানকার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্যামেরা কেনার দরপত্র আহ্বান করবে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার। এরই মধ্যে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে এসপিদের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোববার রাতে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে গতকাল রাতে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে বডি ক্যামেরা এসপিরা কিনবেন। পুলিশ সদরদপ্তর এটা কেন্দ্রীয়ভাবে কিনছে না। কোথায় দরকার হবে তা ঠিক করবেন এসপিরা। আশা করি যথাসময়ে ক্যামেরা কিনতে পারবেন তারা।
গত আগস্টে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল, আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশের জন্য ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা কেনার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৮ নভেম্বর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘বডি ক্যামেরার সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। বডিক্যামটা আসবে, হয়তো এখন একটু যৌক্তিক হিসেবে আসবে। যেসব সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর) জায়গা আছে, ওইখানে আমরা বডি ক্যামেরা সুপারিশ করেছি। সব জায়গায় বডি ক্যামেরা দিতে পারব না।’
আগে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা কেনার কথা ছিল, এখন সেটা কমবে কেন– এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যাটা কমবে। তবে কত কমবে, তা এখন বলব না।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টিম রয়েছে। যারা বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখছেন কোথায় বডি ক্যামেরা প্রয়োজন হবে। কেবল ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের জন্য বডি ক্যামেরা থাকবে। এরই মধ্যে কিছু জেলায় কোনো কোনো কেন্দ্রে বডি ক্যামেরাসহ পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগে যে সংখ্যা বলা হয়েছিল তার তুলনায় ক্যামেরার সংখ্যা আরও কমবে।
রোববার রাতে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা জেলার আওতাধীন কেন্দ্রের মধ্যে কতটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ সেটির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আমাদের ৭০টি বডি ক্যামেরা লাগবে। সপ্তাহ দুয়েকের ভেতরে ক্যামেরা হাতে পাওয়ার আশা করছি। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশের যারা ক্যামেরা ব্যবহার করবেন তাদের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ক্যামেরা পাওয়ার পর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। ক্যামেরায় কী ধরনের প্রযুক্তি থাকবে সেটি ঠিক করতে এটি কমিটি আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুলিশের শরীরে লাগানো থাকে বডি ক্যামেরা। দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ কী ধরনের আচরণ করছে, কাউকে নিপীড়ন করছে কিনা, সেটি দেখতে ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া পুলিশের অভিযানেও ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড রাখতে বডি ক্যামেরার ব্যবহার করে থাকে। ক্যামেরায় যে সব ভিডিও ও অডিও যুক্ত থাকে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে কন্ট্রোল সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়।
গত আগস্টে সরকার বডি ক্যামেরা ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়ার পর এ নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠকও হয়েছে। সে সব বৈঠকে আগামী নির্বাচনে বডি ক্যামেরা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারেরও সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কমিটি করা হয়।
গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জার্মানি, চীন এবং থাইল্যান্ডের তিনটি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এসব ক্যামেরা সরবরাহের জন্য। পুলিশ অফিসার এবং কনস্টেবলরা নির্বাচনের সময় ডিভাইসগুলো তাদের বুকে পরবেন। প্রধান উপদেষ্টা এ সময় কর্মকর্তাদের বডিক্যামগুলো দ্রুত কেনা এবং হাজার হাজার পুলিশ সদস্যের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।’
টিজে/টিকে