আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে আলোচিত বেগম জিয়ার মৃত্যুর খবর

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি থেকে শুরু করে আল জাজিরা ও অন্যান্য গণমাধ্যমলোতেও বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর প্রধান শিরোনামে উঠে এসেছে।

বিবিসি তাদের খবরে বলেছে, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন।

তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ফেসবুকে ঘোষণা করেছে, ‘আমাদের প্রিয় নেত্রী আর আমাদের মধ্যে নেই। তিনি মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’

এতে আরও বলা হয়, সোমবার রাতে চিকিৎসকরা বলেছিলেন যে, জিয়ার অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটজনক’। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল, কিন্তু তার বয়স এবং সামগ্রিকভাবে খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে একই সময়ে একাধিক চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব ছিল না।’

২০ বছরের মধ্যে দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করার পর ১৯৯১ সালে বেগম জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী সরকার প্রধান হন, জানিয়েছে সংবাদমাধ্যটি।

আল জাজিরা জানায়, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন বলে তার দল এবং স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

তারা বলছে, ‘তার শেষ দিনগুলোতে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা মুহাম্মদ ইউনূস বেগম খালেদা জিয়ার জন্য জাতির কাছে প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, তাকে জাতির জন্য সর্বোচ্চ অনুপ্রেরণার উৎস বলে অভিহিত করেছিলেন।

তার ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ১৭ বছর নির্বাসনে থাকার পর বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশে ফিরে আসেন, যেখানে তাকে বিপুল সংখ্যক উল্লাসিত সমর্থক স্বাগত জানান, বলছে আল জাজিরা।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও বেগম খালেদা জিয়া ২০০৬ সাল থেকে ক্ষমতার বাইরে ছিলেন এবং বেশ কয়েক বছর জেল অথবা গৃহবন্দী ছিলেন, তবুও তিনি এবং তার দল বিএনপি প্রচুর সমর্থন অর্জন করেছে।

সংবাদমাধ্যমটি আরও বলছে, বিএনপিকে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংসদীয় নির্বাচনে জয়ের জন্য এগিয়ে থাকা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার ছেলে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, ৬০ বছর বয়সী তারেক রহমান প্রায় ১৭ বছর নির্বাসন থেকে গত সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাকে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ব্যাপকভাবে দেখা হচ্ছে।

এছাড়াও রয়টার্স জানায়, ১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে বেগম জিয়ার স্বামী নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে লাজুক এবং নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে বর্ণনা করা হত। তার স্বামী, সামরিক নেতা এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে হত্যা করা হয়।

তিন বছর পর তিনি তার স্বামীর প্রতিষ্ঠিত বিএনপির প্রধান হন এবং দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রুতি দেন।

বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এসব তথ্য।


তারা আরও জানায়, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং কিডনি, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড এবং চোখকে প্রভাবিত করে এমন দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সহ একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতার সাথে লড়াই করছিলেন। বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞরা তার চিকিৎসা তত্ত্বাবধান করছিলেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, মঙ্গলবার তার রাজনৈতিক দল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০।

এদিকে, পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলোতেও বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরটি গুরুত্ব পেয়েছে। ডন জানিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ফজরের নামাজের ঠিক পরে ইন্তেকাল করেছেন।আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং সকলকে তার বিদেহী আত্মার জন্য প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ করছি। এছাড়া জিও নিউজ, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ছাড়াও অন্যান্য গণমাধ্যমেও বেগম জিয়ার মৃত্যুর খবর জানানো হয়।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং বেগম জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গত ২৩ নভেম্বর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরামের শ্রীপুর গ্রামে। মা তৈয়বা বেগমের জন্ম পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ীতে। তাদের তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে খালেদা জিয়া তৃতীয়।

টিজে/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সাকিবের শোক Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়া কখনো আপসের চোরাবালিতে যাননি: দুদু Dec 30, 2025
img
চীনের জনগণ সর্বদা সর্বোচ্চ সম্মানের সঙ্গে বেগম জিয়াকে স্মরণ করবে: চীনা রাষ্ট্রদূত Dec 30, 2025
যে অভ্যাস মানলে জীবন ব-দ-লে যাবে | ইসলামিক টিপস Dec 30, 2025
নবিজীর তরুন বয়েসের একটা চমৎকার ঘটনা | ইসলামিক জ্ঞান Dec 30, 2025
img
আপসহীনতার মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন খালেদা জিয়া: আখতার Dec 30, 2025
img
এত শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসায় বেগম জিয়ার বিদায় বিশেষ মুহূর্ত: আসিফ নজরুল Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ইইউ-ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার শোক Dec 30, 2025
img
বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা বুধবার বাদ জোহর Dec 30, 2025
img
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে বেগম খালেদা জিয়াকে Dec 30, 2025
img

জাতির উদ্দেশে ভাষণ

ধৈর্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Dec 30, 2025
img
বেগম খালেদা জিয়া অন্যায়ের কাছে কোনোদিন মাথা নত করেনি: ড. মঈন খান Dec 30, 2025
img
আগামীকাল থেকে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা, বুধবার সাধারণ ছুটি Dec 30, 2025
img
বেগম জিয়ার মৃত্যুতে জিএম কাদেরের শোক Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তারকাদের শোক প্রকাশ Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ইসির শোক প্রকাশ Dec 30, 2025
img
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ডাকসুর শোক প্রকাশ Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তামিম-ইমরুলের মন্তব্য Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়া ছিলেন পাকিস্তানের নিবেদিত বন্ধু: শাহবাজ শরীফ Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শোক প্রকাশ Dec 30, 2025