আতশবাজি আর উৎসবের আমেজে পৃথিবীর নানা দেশে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কেন জানুয়ারির ১ তারিখকেই বছরের প্রথম দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হলো? এর পেছনে কোনো প্রাকৃতিক বা জ্যোতির্বিজ্ঞানসম্মত কারণ আছে, নাকি এটি কেবলই মানুষের তৈরি একটি প্রথা?
জানুয়ারির ১ তারিখকে নতুন বছরের সূচনা হিসেবে ধরার ঐতিহাসিক বিবর্তন ও এর পেছনের কারণ জানাতেই আজকের প্রতিবেদন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক—
জানুয়ারি ১ : ক্যালেন্ডারের বিবর্তন ও রোমান ইতিহাস
নতুন বছরের সূচনার ইতিহাস ঘাঁটলে ফিরে যেতে হবে প্রাচীন রোমে। এর বিবর্তন মূলত তিনটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত।
আদি রোমান ক্যালেন্ডার ও মার্চের শুরু
প্রাচীন রোমের একেবারে প্রথম দিকের ক্যালেন্ডারে বছর শুরু হতো ১ মার্চ থেকে। সেই ক্যালেন্ডারে মাস ছিল মাত্র ১০টি এবং বছরের মোট দিন ছিল ৩০৪। আজও আমাদের মাসের নামগুলোতে এর প্রমাণ পাওয়া যায় (যেমন : ল্যাটিন শব্দ 'Septem' মানে ৭, তাই সেপ্টেম্বর ছিল সপ্তম মাস; 'Decem' মানে ১০, তাই ডিসেম্বর ছিল দশম মাস)। কিন্তু এই ক্যালেন্ডারে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে দিন-ক্ষণের ব্যাপক অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।
জানুসের নামানুসারে জানুয়ারি ও জুলিয়াস সিজার
খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার তৎকালীন প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদদের পরামর্শে ক্যালেন্ডারে আমূল পরিবর্তন আনেন, যা ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ নামে পরিচিত। সিজারই প্রথম জানুয়ারির ১ তারিখকে বছরের শুরু হিসেবে ঘোষণা করেন।
জানুস : জানুয়ারি মাসের নামকরণ করা হয়েছিল রোমান দেবতা ‘জানুস’-এর নামানুসারে। জানুসের দুটি মুখ ছিল—একটি পেছনের দিকে (অতীত দেখার জন্য) এবং অন্যটি সামনের দিকে (ভবিষ্যৎ দেখার জন্য)।
নতুন শুরুর প্রতীক হিসেবে এই মাসটিকেই বছরের সূচনার জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়।
রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর মধ্যযুগে ইউরোপের অনেক খ্রিস্টান দেশ ১ জানুয়ারিকে বছরের শুরু হিসেবে মানতে অস্বীকার করে। তারা ২৫ মার্চ (Annunciation Day) বা ২৫ ডিসেম্বর (ক্রিসমাস)-কে বছরের শুরু হিসেবে পালন করতেন। তবে ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি ক্যালেন্ডারের ত্রুটি সংশোধন করে ‘গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার’ প্রবর্তন করেন এবং পুনরায় ১ জানুয়ারিকে বছরের আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ধীরে ধীরে সারা বিশ্ব এই পদ্ধতি গ্রহণ করে নেয়।
১ জানুয়ারি পালনের তাৎপর্য
যদিও বিভিন্ন সংস্কৃতিতে নিজস্ব নববর্ষ রয়েছে (যেমন : পহেলা বৈশাখ বা চীনা নববর্ষ), কিন্তু ১ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে একটি সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। এটি কেবল তারিখ পরিবর্তন নয়, বরং বৈশ্বিক প্রশাসনিক কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ মানদণ্ড তৈরি করেছে।
জানুয়ারির ১ তারিখ মনে করিয়ে দেয় রোমান দেবতা জানুসের কথা, যিনি সেই বিশ্বাসের মানুষদের শেখান অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে। হাজার বছরের ইতিহাস ও সংস্কার পেরিয়ে আজ এই দিনটি বিশ্বের বৃহত্তম উৎসবে পরিণত হয়েছে।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
এমকে/টিএ