যেসব নিয়ম মেনে চললে থাকবে না ডায়াবেটিস

রক্তে ইনসুলিনের অভাবই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। চিকিৎসকেরা বলছেন, জীবনযাত্রায় খানিক পরবর্তন আনলেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। তার জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে করতে হবে শরীরচর্চা, ডায়েটে আনতে হবে বদল। যে কোনো শারীরিক সমস্যা যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা যায়, তা হলে চিকিৎসা শুরু করতেও অনেক সুবিধা হয়। মাথা ঘোরা, ওজন কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়ার মতো কিছু প্রাথমিক লক্ষণ জানান দেয় ডায়াবেটিস বাসা বেঁধেছে শরীরে।

ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। মানুষ যখন খাবার গ্রহণ করে, তখন শরীরের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো যে খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটির অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকেই বলা হয় ডায়াবেটিস।

ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস ও টাইপ টু ডায়াবেটিস।

টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চেয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা নিয়ম মেনে চললেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। তাদের ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় না।

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তখন রক্তের প্রবাহে গ্লুকোজ জমা হতে শুরু করে। বিজ্ঞানীরা এখনও বের করতে পারেনি কী কারণে এরকমটা হয়। তবে তারা বিশ্বাস করেন যে এর পেছনে জিনগত কারণ থাকতে পারে। অথবা অগ্ন্যাশয়ে ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো নষ্ট হয়ে গেলেও এমন হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ১০ শতাংশ এই টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলো জীবনধারার রোগ। এর জন্য দায়ী হলো ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা। প্রাথমিক অবস্থায় যদি এটি চিকিৎসা করা না হয় তাহলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।

টাইপ টু ডায়াবেটিসে যারা আক্রান্ত তাদের অগ্ন্যাশয়ে যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না অথবা এই হরমোনটি ঠিক মতো কাজ করে না। সাধারণত মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধ ব্যক্তিরা টাইপ টু ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও যাদের ওজন বেশি এবং যাদেরকে বেশিরভাগ সময় বসে বসে কাজ করতে হয় তাদেরও এই ধরনের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে তা বেড়ে যাওয়ার উপসর্গগুলোকেও চিনে রাখা জরুরি। না হলে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা অসম্ভব। সাধারত, শরীরের বেশ কিছু লক্ষণের প্রতি সজাগ থাকলেই এই অসুখ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়। জেনে নিন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর টিপস-

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

চিকিৎসকরা জানান, অতিরিক্ত ওজন টাইপ টু ডায়াবেটিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। স্থূলতা এই রোগকে আরও বৃদ্ধি করে। তাই আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা এবং আপনার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন করুন

আপনার খাদ্যতালিকায় প্রথম এবং প্রধান পরিবর্তনগুলির মধ্যে একটি হল চিনি খাওয়া। সাদা প্রক্রিয়াজাত চিনির পণ্যগুলি ব্যবহার করা বন্ধ কর‍তে হবে। আপনার ডায়েটে প্রোটিন রাখুন কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা। প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল।

খেতে হবে তাজা সবজি ও ফল। তাই বলে ফলের জুস খেতে যাবেন না যেন! তার চেয়ে বরং ফল চিবিয়ে খান। চিবিয়ে খেলে ফলে থাকা কার্বোহাইড্রেট রক্তের সঙ্গে মেশে সহজে। এ ছাড়া চিবিয়ে খেলে দাঁত ও মুখের পেশিও কাজ করার সুযোগ পায়। এমন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফলের যে রস শরীর পায়, সেটি সহজে পরিপাক হয়।

বেশি ভাজাপোড়া বা বেশি চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। লবণ বুঝে খেতে হবে। যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল।

খাবার খেতে হবে ক্যালরি মেপে। কতটুকু খাবারে কতটুকু ক্যালরি ঢুকছে শরীরে, তা মাথায় রাখতে হবে। বুঝেশুনে খেলেই আর বিপদের সম্ভাবনা নেই।

ব্যায়াম

আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে, আপনাকে একটি রুটিন শুরু করতে হবে যাতে আপনি প্রতিদিন কমপক্ষে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়াম শরীরের ইনসুলিন (ডায়াবেটিসের সঙ্গে যুক্ত একটি হরমোন) ব্যবহার করার এবং গ্লুকোজ শোষণ করার ক্ষমতাকে উন্নত করে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নাঈমুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা Oct 27, 2025
img
এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে জাপানে পৌঁছলেন ট্রাম্প Oct 27, 2025
img
৪৮তম বিসিএসে নিয়োগপ্রত্যাশী চিকিৎসকদের সড়ক অবরোধ Oct 27, 2025
img
ভারত সফরের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার দল ঘোষণা Oct 27, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হয়নি : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী Oct 27, 2025
img
সাবেক যুগ্ম সচিব কিবরিয়া মজুমদারের পাঁচ ব্যাংক হিসাব জব্দ Oct 27, 2025
img
'বিতর্কিত উপদেষ্টা' নিয়ে জামায়াত-এনসিপির এত মিল কেন? প্রশ্ন জাহেদ উর রহমানের Oct 27, 2025
img
ইয়ামালের হাতে যাচ্ছে পিকে-শাকিরার পুরনো প্রাসাদ Oct 27, 2025
img
ক্ষমতায় গেলে নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হবে : জামায়াত আমির Oct 27, 2025
img
ড্যাফোডিলের হামলায় সিটি ইউনিভার্সিটিতে ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে : ভিসি লুৎফর রহমান Oct 27, 2025
img
শাপলা প্রতীক নিয়েই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব : সারজিস আলম Oct 27, 2025
img
উত্তরা ইপিজেডের ৪ কারখানা বন্ধ ঘোষণা Oct 27, 2025
img
সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের আসামিদের দেশত্যাগ রোধে হিলি চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা Oct 27, 2025
img
ডাকসুর পদবি ব্যবহার করে শিক্ষকদের ওপর মবতন্ত্র প্রয়োগ করা অনাকাঙ্ক্ষিত : নাছির Oct 27, 2025
img
মাহফুজ তার বক্তব্যে প্রমাণ করেছেন, তিনি ওই পদের যোগ্য নন : মাসুদ কামাল Oct 27, 2025
img
না ফেরার দেশে ছাতকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আলী ইনসান Oct 27, 2025
img
নেতানিয়াহু সরকার থাকা অবস্থায় সে দেশে কনসার্ট করবে না 'রেডিওহেড' Oct 27, 2025
img
এমআরআই পরীক্ষা করেছেন ট্রাম্প, সবকিছু ঠিক আছে দাবি Oct 27, 2025
img
পাকিস্তানে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চায় ঢাকা Oct 27, 2025
img
বিয়ে ছাড়াই ভালো আছি: ইশা সাহা Oct 27, 2025