নীতি সংশোধন ছাড়া রপ্তানি কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়বে না

বাণিজ্যনীতিতে বড় ধরনের সংশোধন ছাড়া কাঙ্ক্ষিত হারে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব নয়। সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যও সম্প্রসারণ হবে না। গতকাল সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের ওপর দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টাস্কফোর্সের সভাপতি এবং বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে টাস্কফোর্স যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টাস্কফোর্সের সুপারিশ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন এর সদস্য সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান ও র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আবদুর রাজ্জাক।

অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, দেশের অর্থনীতির সমস্যা কী, সে বিষয়ে সবাই কমবেশি অবগত। অনেক দিন ধরেই এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি নিজে অন্তত এক হাজার অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন। কিন্তু কেন সমস্যার সমাধান হয় না বা কোথায় গিয়ে সব আটকে যায়, তার ব্যাখ্যা দরকার। টাস্কফোর্সের কাছে তাঁর প্রত্যাশা ছিল, সংস্কার কেন আটকে যায়, তার ব্যাখ্যা থাকবে। তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে । ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা বা চুক্তি করতে হবে ।

ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের পরিমাণ খুব বেশি নয়। বাংলাদেশের সমপরিমাণ জনসংখ্যা আছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। তিনি বলেন, নানা সুরক্ষা থাকায় দেশের বাজারে ব্যবসা করা অনেক সহজ। সে ক্ষেত্রে মান এবং শ্রম অধিকার রক্ষার বালাই নেই। এমনকি দেশে যে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে, সেই বিনিয়োগ থেকে উৎপাদিত পণ্য দেশের বাজারেই বেশি বিক্রি হচ্ছে, রপ্তানি হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, উচ্চ ট্যারিফের কারণে দ্রব্যমূল্যও অনেক বেড়ে যায়। আদর্শ হচ্ছে শুধু কাস্টমস ডিউটি রাখা।

অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পোশাক মূলত তুলানির্ভর। বিদেশে কৃত্রিম তন্তুভিত্তিক পোশাকের বড় বাজার আছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে রপ্তানিবিমুখতা দূর করতে শুল্ক নীতির সঙ্গে অন্যান্য নীতির সমন্বয় দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, গত সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। ওই সময় বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে টাস্কফোর্স গত ৩০ জানুয়ারি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা এখনও হাতে পাননি বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সুরক্ষাবাদী বাণিজ্যিক পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের পদে পদে বাধা। নিয়মকানুনের ফাঁস শিথিল করতে দেশে বড় ধরনের উদ্যোগ দরকার। এ সময় অধ্যাপক রেহমান সোবহান তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে বা বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাঁর এসব কথার কতটুকু বাস্তবায়ন হবে। একই সঙ্গে তাঁর যেসব খাতে ব্যবসা আছে, সেখানে বাজার উদারীকরণ হবে কিনা। জবাবে আমীর খসরু বলেন, এ ক্ষেত্রে তাঁর আপত্তি নেই। বাজারে প্রতিযোগিতা আসুক, তিনি চান।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগেরবার ট্রাম্প চীনের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এবার আরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। অন্যদিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি ইউনিট অকার্যকর করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পৃথিবীটা আদর্শ জায়গা নয়। সবখানেই কমবেশি একই পরিস্থিতি এবং বাস্তবতা মোকাবিলা করে আমাদের এগোতে হবে।

ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে টেকসই নীতি কাঠামো গড়ে তুলতে না পারলে বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগও বাড়বে না। 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা এবং সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট Nov 11, 2025
“ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা থেকে নায়ক হয়েছি Nov 10, 2025
আসিফের উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া, বললেন মামুনুল Nov 10, 2025
img
গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি প্রেম চোপড়া Nov 10, 2025
img
‘রাষ্ট্র যেখানে ব্যর্থ, রাজপথই সেখানে ফয়সালা’ Nov 10, 2025
img
নারীরা ঘরে সময় দিলে, সম্মানিত করবে সরকার: জামায়াত আমির Nov 10, 2025
img
জারিনের স্মরণ সভায় গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে জিতেন্দ্র Nov 10, 2025
img
দিল্লিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ Nov 10, 2025
img
বদলে যাচ্ছে বিপিএল নিলামের তারিখ Nov 10, 2025
img
মুশফিকের ৯৯তম টেস্টে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ Nov 10, 2025
img
পরিস্থিতির কারণে শাকিবের সঙ্গে বিয়ের কথা গোপন রাখা হয়েছিল, জানালেন অপু বিশ্বাস Nov 10, 2025
img
প্লট-ফ্ল্যাট হস্তান্তরে লাগবে না কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি Nov 10, 2025
রাবি রেজিস্ট্রার অফিসে বিএনপির সভার অভিযোগ Nov 10, 2025
''জুলাইকে শুধুমাত্র ক্ষমতার পরিবর্তন হিসেবে দেখতে চাইনা'' Nov 10, 2025
পুলিশের দাবি ঢাকায় গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী Nov 10, 2025
img
এনসিপি জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ Nov 10, 2025
img
‘ঈথা’তে জুটি বাঁধতে চলেছে শ্রদ্ধা কাপুর ও রণদীপ হুদা Nov 10, 2025
img
নারী ফুটবলের উন্নয়নে ফিফার নতুন উদ্যোগ ‘এমপাওয়ার হার’ Nov 10, 2025
img
‘বেবি কৌশল’কে নিয়ে বাসায় ফিরলেন ক্যাটরিনা Nov 10, 2025
img

ফুটবল নিয়ে আসিফ

‘মারপিট করব বলেছি, করিনি, তারা তো করে ফেলেছে’ Nov 10, 2025