রোজা-ঈদ সামনে রেখে চাঙ্গা হচ্ছে মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট

আসন্ন রোজা ও ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে ফের কর্পোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেট চাঙ্গা হচ্ছে। অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে মুরগির বাচ্চা ও ফিডের দাম। এ সিন্ডিকেট দৈনিক গ্রাহকের পকেট থেকে মুনাফার বাইরে ৯ কোটি হাতিয়ে নিচ্ছে। যার প্রভাব শিগগিরই খুচরা বাজারেও পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, কর্পোরেট সিন্ডিকেটের কবলে ফের দেশের পোল্ট্রি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের বিভিন্ন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের কারণে প্রান্তিক খামারিরা ধ্বংসের পথে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সংকটের মধ্যে পড়েছে। এ সিন্ডিকেটের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে পোল্ট্রি বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। যার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের ব্যবসা ও মুনাফা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো এসব খামারি সরকারি মিটিংগুলো থেকে বাদ পড়ে যায়। সেখানে শুধু বড় কর্পোরেট কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের কৃষি খাতের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব খামারিদের জীবনযাত্রা ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় মারাত্মক হবে।

মো. সুমন হাওলাদার বলেন, ব্রিডার কোম্পানি ও ফিড ইন্ডাস্ট্রির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। আর এসব কর্পোরেট সিন্ডিকেটের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন ও ফ্রিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন। ব্রিডার কোম্পানিগুলো কৃত্রিমভাবে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ফেলছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ব্রয়লার বাচ্চার জন্য ৪৯ টাকা নির্ধারণ করলেও কোম্পানিগুলো তা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করছে। লেয়ার মুরগির বাচ্চা ৫৭ টাকা নির্ধারিত হলেও তা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা খামারিদের জন্য অত্যধিক ব্যয়বহুল। এর ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং খামারিরা লাভ করতে পারছেন না। আবার চাহিদা বাড়ানোর অজুহাতে সিন্ডিকেট ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ কমিয়ে দেয়, যাতে দাম আরও বাড়ানো যায়। এ কৌশলের মাধ্যমে প্রতিদিন তারা মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে প্রায় ৯ কোটি টাকা আয় করছে।

আসন্ন রোজা ও ঈদে এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনে ঈদ ও অন্য বড় উৎসবগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে এ সিন্ডিকেট মুরগির বাচ্চার দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। পোল্ট্রি খামারিদের জন্য এটি একটি বড় চাপ। কারণ, বড় উৎসবের সময় যখন খামারিরা সবচেয়ে বেশি লাভের আশা করেন, তখন এ সিন্ডিকেট নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য দাম বাড়িয়ে দিয়ে খামারিদের পকেটে হাত দেয়। এ কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কারসাজির সঙ্গে ফিড ইন্ডাস্ট্রিও জড়িত এমন অভিযোগ করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ফিড ইন্ডাস্ট্রির সিন্ডিকেটও একইভাবে খামারিদের ওপর চাপ তৈরি করছে। বিশ্ববাজারে ফিডের দাম কমলেও বাংলাদেশে কমছে না। ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে ফিডের দাম অতিরিক্ত বাড়ানো হয়েছিল। যা আর কমানো হয়নি। ২০২২ সালের শেষের দিকে, প্রতি বস্তা ফিডের দাম ২৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬০০ টাকা হয়ে যায়। যা ছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ডিম বা মুরগি উৎপাদনে ৭০-৭৫ শতাংশ খরচই ফিডে চলে যায়। তাছাড়া ফিড ও মুরগির বাচ্চার গুণগত মানও নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে এবং খামারিদের বাধ্য করা হচ্ছে কোম্পানির নির্দিষ্ট ফিড কিনতে।

সুমন হাওলাদার আরও অভিযোগ করেন, সিন্ডিকেটের আরও একটি ভয়ংকর কৌশল হলো ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’। এর মাধ্যমে নীল চাষের মতো খামারির স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বড় কোম্পানিগুলো এখন ক্ষুদ্র খামারিদের সাথে চুক্তি করে উৎপাদন করিয়ে নিচ্ছে। এ চুক্তির শর্তগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যে খামারিরা শুধু উৎপাদন করলেও প্রকৃত মুনাফা চলে যাচ্ছে বড় কোম্পানির পকেটে। এ ছাড়া সরকারি মিটিংগুলোতে প্রান্তিক খামারিদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। সরকারি সিদ্ধান্তগুলো সাধারণত বড় কর্পোরেট কোম্পানির প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নেওয়া হয়। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

পোল্ট্রি শিল্পে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হলে ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন এবং ফিড ইন্ডাস্ট্রির কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

একইসঙ্গে সঠিক বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা, খামারিদের জন্য খাদ্য ও বাচ্চা সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের পদ্ধতি বন্ধ করার বিষয়েও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।



Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইতালিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি Sep 03, 2025
img
ফেনীতে 'সংঘাত’ এড়াতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি স্থগিত Sep 03, 2025
img
আগামী ৫ দিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে যেসব এলাকায় Sep 03, 2025
img
আফগানিস্তানে ফের ভূমিকম্প, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার আশঙ্কা Sep 03, 2025
img
কংগ্রেসে ইসরায়েলের সমর্থন কমছে : ট্রাম্প Sep 03, 2025
img
শারজায় পাকিস্তানের বিপক্ষে আফগানদের জয় Sep 03, 2025
চীন বিশ্বকে জানাতে চাইছে শুধু অর্থনৈতিক শক্তিই নয়, বৈশ্বিক রাজনীতির নেতৃত্বেও হবে রদবদল! Sep 03, 2025
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ৬০ ঘন্টা পর জড়িতদের বিরুদ্ধে চবি প্রশাসনের মামলা Sep 03, 2025
নির্বাচন নিয়ে যে চুড়ান্ত বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা Sep 03, 2025
নারী নিপীড়ন বিষয়ে যা বললেন সাদিক কায়েম Sep 03, 2025
সরকার প্রধানের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক চান উপদেষ্টা ফারুকী Sep 03, 2025
পুরুষদের প্রতি তামান্নার বিশেষ বার্তা! Sep 03, 2025
বলিউডের অন্ধকার দিক উন্মোচন করলেন কৃতি শ্যানন! Sep 03, 2025
দামি কসমেটিকস নয়, ত্বকের যত্নে সারার সোজাসাপটা ফর্মুলা Sep 03, 2025
বিটিএস তারকা জাংকুকের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বে''গ! Sep 03, 2025
অপু-শাকিবের ছেলেকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে, স্কুল ভর্তির প্রস্তুতি! Sep 03, 2025
img
বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিতে কমোরোসের রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ Sep 03, 2025
img

প্রধান উপদেষ্টা

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে উৎসবমুখর পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে Sep 03, 2025
img

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাস ও হল খোলার আশ্বাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি সাময়িক প্রত্যাহার Sep 03, 2025
img
কয়জনকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হয়েছে জনগণ জানতে চায় : ইশরাক Sep 03, 2025