মার্কিন শুল্কের প্রভাব পড়তে পারে দেশের পুঁজিবাজারেও

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ ঘোষণার পর থেকেই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। এ ঘোষণার পর থেকেই ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ঘটছে। বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপরও ৩৭ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে দেশটিতে রফতানি হওয়া তৈরি পোশাক ও চামড়া পণ্যের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের পুঁজিবাজারেও বস্ত্র ও চামড়া খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি থাকায় এর প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে মন্দা পুঁজিবাজারে এ ধরনের ঘোষণার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

গত ২ এপ্রিল ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকাল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের হার নির্ধারণে নিজস্ব ফর্মুলা ব্যবহার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ওপর চলমান শুল্কহার গড়ে ১৫ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে নতুন আরোপ করা ৩৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে প্রায় ৫২ শতাংশ শুল্ক বসবে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর। এ রকম হলে বাংলাদেশের পণ্যকে যুক্তরাষ্ট্রের বড় মাত্রার আমদানি শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া বাংলাদেশের প্রধান পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক। এ পণ্যই মোট রফতানি অর্থমূল্যের ৮২ শতাংশ। এছাড়া অন্য পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে হেডগিয়ার, জুতা, অন্যান্য বস্ত্রপণ্য, পালক এবং পালক দ্বারা তৈরি সামগ্রী, চামড়াজাত পণ্য, মাছ, শস্যদানা, আসবাব প্রভৃতি।

দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে বস্ত্র খাতের ৫৮টি ও চামড়া খাতের ৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারের মোট বাজার মূলধনের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বস্ত্র এবং দশমিক ৬ শতাংশ চামড়া খাতের দখলে রয়েছে। সব মিলিয়ে এ দুই খাতের দখলে রয়েছে মোট বাজার মূলধনের ৪ শতাংশ। তাছাড়া দেশের রফতানিমুখী বড় তৈরি পোশাক উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। তাছাড়া বস্ত্র ও চামড়া খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পণ্যের বড় একটি অংশই যায় ইউরোপের বাজারে। ফলে এ দুই খাতের রফতানি পণ্য এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল নয়।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারে মার্কিন শুল্ক আরোপের বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে মনস্তাত্ত্বিক কারণে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে গেলে সেটির একটি প্রভাব পড়তে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই পুঁজিবাজারে নেই। এর মধ্যে যেগুলো তালিকাভুক্ত রয়েছে সেগুলোর বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপ। তবে যারা ডেনিম পণ্য রফতানি করে সেগুলোর বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যায়। সেসব পণ্যের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে। তাছাড়া দেশের পুঁজিবাজারের আকার এত ছোট যে এখানে এ ধরনের ঘোষণার প্রভাব খুব বেশি পড়ার সুযোগ নেই। এছাড়া বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার ঐতিহাসিকভাবে নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থায় এটি আর খুব বেশি নিম্নমুখী হওয়ার সুযোগ নেই। তবে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে গেলে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়লেও সেটি খুব দ্রুতই পুনরুদ্ধার হয়ে যাবে।’

-এফপি/এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে নির্ভরশীল দল বিএনপি: মির্জা ফখরুল Apr 30, 2025
img
ঘরে ঢুকে পড়ল লোক, কাঁ-প-ছে-ন মৌনী! Apr 30, 2025
২৫০ নয়, এখন ৫০০ লিটার তেল পাবেন কমিশন সদস্যরা Apr 30, 2025
‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সমালোচনার ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব Apr 30, 2025
বুয়েটের নতুন রিকশার অনুমোদন দেবে সরকার Apr 30, 2025
দীপ্ত টিভির সকল সংবাদ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা Apr 30, 2025
সেকেলে সমরাস্ত্র নিয়ে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত: নিউইয়র্ক টাইমস Apr 30, 2025
অপু বিশ্বাস, নিপুণ, নুসরাত ফারিয়াসহ ১৭ শিল্পীর বিরুদ্ধে মামলা Apr 30, 2025
img
আবেদন কি শুধু সাজে? স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় যেন তার জবাব Apr 30, 2025
img
পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কোথায় মজুদ আছে? Apr 30, 2025