সংকট নেই তবু বাড়তি দরে ডলার বিক্রি

সংকট থেকে বের হয়ে কিছুটা স্বস্তিতে ফিরেছে দেশের ডলারবাজার। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে সে তুলনায় ডলার নিয়ে তেমন সংকট নেই। সব ব্যাংকেই পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে। এর সঙ্গে ডলারের চাহিদাও বাড়ছে। গত দুই মাসে এলসির পরিমাণ বেড়েছে। চাহিদার সঙ্গে সরবরাহ বেড়েছে ডলারেরও। রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসায় বাজারে ডলারের স্বাভাবিক সরবরাহ রয়েছে। তবে সরবরাহ বাড়লেও এখনো বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে ডলার।

আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হলে এখনো ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। খোলা বাজারে ১২৫ থেকে ১২৬ টাকার নিচে কোথাও ডলার পাওয়া যায় না। গত দুই মাসের ব্যবধানে ডলারের দর কমার পরিবর্তে উল্টো কিছুটা বেড়েছে। তবে ১২২ টাকা দরে ডলারের আন্ত ব্যাংকিং লেনদেন হচ্ছে। গত মার্চ মাসে দেশে রেমিট্যান্স বাবদ প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার দেশে এসেছে। এতে ডলারের সংকট কাটলেও দাম কমেনি। উল্টো কিছুটা বেড়েছে।

ব্যাংকে ঘোষিত দরে কোথাও ডলার বিক্রি হচ্ছে না। মতিঝিলের বিভিন্ন ডলার কেনাবেচার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, কেউ ১২৬ টাকার নিচে ডলার বিক্রি করছেন না। ব্যাংকগুলোতে খোলাবাজারে ডলার বিক্রি করছে সর্বনিম্ন ১২৫ টাকায়। কোনো কোনো ব্যাংক ১২৬ টাকায় ডলার বিক্রি করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যেখানে সর্বোচ্চ দর ছিল ১২৪ থেকে ১২৫ টাকা। মার্চে এসে সেই দর ১২৬ টাকায় উঠেছে। জানুয়ারিতেও অনেক ব্যাংকের কাছে ডলার ছিলই না। নিজস্ব ব্যয় মেটাতে এসব ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনতে হয়েছে। এখন ব্যবসায়ীদেরও এই দরেই ডলার দর নির্ধারণ করে এলসি খুলতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত দরে কোথাও ডলার কেনাবেচা হতে দেখা যায়নি।

ব্যাংকাররা জানান, নানা অনিশ্চয়তার কারণে প্রবাসী কিংবা রপ্তানিকারকদের অনেকে ডলার ধরে রাখছিলেন। ডলারের দর বেড়ে ১৫০ টাকায় ঠেকবে এমন গুঞ্জন ছিল বাজারে। গত ডিসেম্বর থেকে রেমিট্যান্স গ্রাহকের নামেও বৈদেশিক মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট খুলে ডলার রাখার সুযোগ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে সুদ মিলছে ৭ থেকে ৯ শতাংশের ওপরে। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে দেশে অর্থ আনতে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আবার বিভিন্নভাবে রিজার্ভ বাড়ানোর মাধ্যমে বাজারে ইতিবাচক একটি বার্তা দিতে পেরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থ পাচার রোধেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এই উন্নতির মধ্যে ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা ফিলছে না। প্রতি মাসেই কিছুটা বাড়ছে দর।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ঈদের কারণে ডলার বেশি আসছে। এখন ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বেশি। আমরা ডলার কিনছি ১২২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে। এটা ভালো দাম। তাই ডলার সরবরাহ বাড়ছে। চাহিদা-জোগান ভিত্তিতে তৈরি হওয়া বাজার মূল্যের এ হিসাবে স্বচ্ছতা আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঈদে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। মার্চে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৩২৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন আসছে প্রায় ১২ কোটি ডলার। আগের মাসেও বিপুল পরিমাণ রেমিট্যন্স দেশে এসেছে। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের আট মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম আট মাসে আসে ১ হাজার ৪৯৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। সে হিসাবে গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসের চেয়ে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৫৫ কোটি ডলার।

রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। কয়েক মাস আগে ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলেনি। ব্যবসায়ীদের বাধ্য করেছে খোলা বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করতে বা ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে দিয়েছে। সেই চিত্র এখন নেই। রেমিট্যান্সের প্রভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমেনি। সর্বশেষ রিজার্ভ ২৫.২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে গত কয়েক মাসে ধরেই ২০ থেকে ১৯ বিলিয়নের মধ্যেই ছিল রিজার্ভ। গত জানুয়ারিতে রিজার্ভ ছিল ১৯ বিলিয়ন, ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে ২০ বিলিয়ন।


এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

কিসের ভিত্তিতে পদক পেল পুলিশ কর্মকর্তা Apr 29, 2025
চীনের বিমানঘাঁটিতে ট্রাম্পের অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান মোতায়েন Apr 29, 2025
আপনি কি তেলাপোকার ফ্যাক্টরি দিছেন? হোটেল মালিককে ভোক্তার কর্মকর্তা Apr 29, 2025
অভিনেতা সিদ্দিককে থানায় সোপর্দ করে যা বললেন ছাত্রদল নেতা আমান Apr 29, 2025
শেখ হাসিনার মেয়ের ৫৭ লাখ টাকার ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ Apr 29, 2025
img
বিরল প্রজাতির শকুন উদ্ধার Apr 29, 2025
img
পিএসসি সংস্কারের ৮ দফা বাস্তবায়নে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম Apr 29, 2025
img
শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী করতে মন্ত্রণালয়ের জরুরি নির্দেশনা Apr 29, 2025
img
“আমি মরিনি ভাই!”—গুজব উড়িয়ে দিলেন ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ রোহিত Apr 29, 2025
img
কালো ধোঁয়া ও পলিথিন ব্যবহারে মোবাইল কোর্টের জরিমানা ও সতর্কবার্তা Apr 29, 2025