যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি বাজারকে আরও অস্থির করবে : বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্সের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র এলএনজি আমদানি করতে চাচ্ছে, তবে এতে উচ্চ খরচ এবং নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই কৌশল সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অস্থিতিশীল জ্বালানি বাজারকে আরও উত্তেজিত করবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সৌর প্যানেল আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের কারণে (কিছু শুল্ক ৩,৫২১ শতাংশে পৌঁছেছে) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত নতুন চাপের মুখে পড়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্স যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকারীদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি স্বাক্ষর করছে।

জানুয়ারিতে বাংলাদেশ লুজিয়ানাভিত্তিক আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এপ্রিলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে লেখা এক চিঠিতে এলএনজি আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশ এরই মধ্যে এলএনজি আমদানির ব্যয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি দেশটিকে নতুন সংকটে ফেলবে। এছাড়া একই ধরনের চুক্তি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকেও বাংলাদেশের মতো চ্যালেঞ্জে ফেলবে।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইএফএ)-এর জ্বালানি বিশেষজ্ঞ স্যাম রেনলন্ডস বলেছেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমেরিকার এলএনজি কেনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর করা একটি ব্যয়বহুল সিদ্ধান্ত হবে। কেননা এতে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।

বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এম্বার (এমবিইআর)-এর একটি নতুন গবেষণার কথা উদ্ধৃত করে বলা হয়, থাইল্যান্ড, কোরিয়া ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো তাদের জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি খরচ করে জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানিতে। নতুন করে এলএনজি আমদানির খরচ বৃদ্ধি পেলে জাতীয় ঋণ বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

যুক্তরাজ্য-সিঙ্গাপুর থেকে ১১৩৭ কোটি টাকার এলএনজি কিনবে সরকার ॥ বিশেষজ্ঞরা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এশিয়ার টেকসই ভবিষ্যতের জন্য অধিক সম্ভাবনাময়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, যার ৯৯ ভাগ এখনো অব্যবহৃত রয়ে গেছে। মার্কিন শুল্ক ঝড়ের বাধা সত্ত্বেও বিশ্লেষকরা মনে করেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এশিয়ার দেশগুলোর নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত এগিয়ে যেতে পারে।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইসিএ)-এর বিশেষজ্ঞ লাউরি মাইল্লিভির্টা বলেছেন, কোনো সন্দেহ নেই যে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নতুন সৌর খাতের ৭০ শতাংশ ও বায়ু বিদ্যুতের ৬০ শতাংশ দখল করবে।

এনার্জি শিফট ইনস্টিটিউটের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা বলেছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত ভূ-রাজনৈতিক সংকটগুলো থেকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার গড়ে তোলার দিকে মনোযোগী হতে হবে এবং ব্যয়বহুল এলএনজি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

রিনিউয়েবলস ফার্স্টের বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ বাসিত গৌরী বলেছেন, গ্লোবাল সাউথের বাজারগুলো বিশেষ করে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে, এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে।

এদিকে, থাইল্যান্ড বা বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যদি এলএনজি অবকাঠামোতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করে, তবে সেখানে বিনিয়োগ আটকে পড়ার শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা সতর্ক করেছেন, বিশ্ব দ্রুত জ্বালানি খাত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ক্রমে কমে আসছে। এ অবস্থায় ব্যয়বহুল এনএনজি খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে ভবিষ্যতে তা বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আরএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সংস্কারে বাধা দিলে রাজপথে নামবে এনসিপি: মুসা Aug 22, 2025
img
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ফের দুর্ঘটনা, নিহত আরও ৩ Aug 22, 2025
img
চট্টগ্রামে মিষ্টিমুখ কারখানায় অভিযান, এক লাখ টাকা জরিমানা Aug 22, 2025
img
আল্লু অর্জুন-অ্যাটলির যুগলবন্দিতে নতুন মাত্রা পাচ্ছে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি Aug 22, 2025
img
সুর-নাচ-রঙে ভরপুর, ‘ডেঞ্জার’ গানে নেট দুনিয়ায় উচ্ছ্বাস Aug 22, 2025
img
নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যে পাঁচ বাংলাদেশি ফুটবলার Aug 22, 2025
img
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ৫৮% মার্কিনি : রয়েটার্স Aug 22, 2025
img
জুলাই শহীদ পরিবার পাবে এককালীন ৩০ লাখ টাকা সহায়তা ও মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা Aug 22, 2025
img
সারা দেশ ডাকসুর দিকে তাকিয়ে আছে : এ্যানি Aug 22, 2025
img
জিম্বাবুয়ে সফরে শ্রীলঙ্কা, চোটে ছিটকে গেলেন হাসারাঙ্গা Aug 22, 2025
img
মহাখালীতে শতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করল ডিএনসিসি Aug 22, 2025
img
ট্রাম্পের শুল্ক চাপের মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর বার্তা দিল ভারত Aug 22, 2025
img
আগামী নির্বাচন অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে : মুফতি ফয়জুল করীম Aug 22, 2025
img
হেরোপান্তি থেকে বাঘি ৪, সজিদের হাত ধরে বলিউডে নতুন মুখ Aug 22, 2025
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীসংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা তুলসী গ্যাবার্ডের Aug 22, 2025
নির্বাচন নিয়ে শর্ত জনগণের উদ্বেগের কারণ: তারেক রহমান Aug 22, 2025
img
হায়দরাবাদে ফিরছেন এনটিআর, শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী অ্যাকশন শিডিউল Aug 22, 2025
মাদ্রাসা প্রধানদের জন্য প্রশাসনের কঠোর সতর্কতা! Aug 22, 2025
img
খুলনায় ভৈরব নদে ফেরি-ট্রলার সংঘর্ষে ৩ জন নিখোঁজ Aug 22, 2025
img
হিলি স্থলবন্দরে ১ দিনেই রেকর্ড পরিমাণ চাল আমদানি Aug 22, 2025