কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের কাছে ‘মে দিবস’ উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের একটি আবেদনপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব মো. ফয়সাল প্রিন্সসহ আরও দুই যুগ্ম সচিব ও তিন যুগ্ম আহ্বায়কের স্বাক্ষরযুক্ত চিঠিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
আর্থিক সহায়তা চেয়ে করা আবেদনের চিঠিতে দেখা যায়, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা ‘মে দিবস উপলক্ষে একযোগে সারা জেলায় ১৫ হাজার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। উক্ত উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আপনার একান্ত সহযোগিতা কামনা করছি। উক্ত উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক এবং সার্বিক সহযোগিতা দানে আপনার সদয় মর্জি হয়।
চিঠিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ইয়াজ ইবনে জসিম, যুগ্ম সদস্য সচিব শামসুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল নাহিদ ভূইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক আইনুল ইসলাম ঝলক ও যুগ্ম আহ্বায়ক মানস সরকারের সই থাকলেও আহ্বায়ক ইকরাম হোসেনের সই নেই।
জানা গেছে, বৃক্ষরোপণে জন্য কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন অফিসে অর্থ সহায়তা চেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক পক্ষের একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এই চিঠির মাধ্যমে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মানুষ মন্তব্য করেছেন। তবে এটাকে সামাজিক কাজ বলে অবিহিত করে বক্তব্য দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার একটি পক্ষ।
কিশোরগঞ্জ জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরুর দিকে প্রধান সমন্বয়ক দায়িত্ব পালন করা অভি চৌধুরী বলেন, পূর্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ যেভাবে চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিলো বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তথাকথিত কিছু সমন্বয়ক এই ব্যানারটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন অফিস-দপ্তরে চাঁদাবাজি করছে। বিষয়টি জেনে আমি নিজেও ফেসবুকে এই পোস্ট দিয়েছি। এই চাঁদাবাজির প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি শুধু কিশোরগঞ্জে নয়, সারাদেশেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামধারী কিছু নেতা চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য ও তদবির বাণিজ্য শুরু করেছেন। যা স্বৈরাচার হাসিনা সরকার পতনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে নষ্ট করেছে। আমরা এই চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য ও তদবির বাণিজ্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্সের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি সত্য নয়, আমরা একটি ভালো কাজ করতে চেয়েছি। এ বিষয়টি একার পক্ষে করা সম্ভব না, তাই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সহায়তা চেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে একটি মহল মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। কর্মসূচিটি নিয়ে আহ্বায়ক অবগত নয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকেই আহ্বায়ক সংগঠনের কাজকর্মে খুব একটা আসেন না, তিনি নিজ উপজেলায় (তাড়াইল) পড়ে থাকেন।
কিশোরগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, এখানে কোনো মিটিং বা আলোচনা ছাড়া এমন কার্যক্রম হাতে নেওয়ায় অনেক সদস্যই এ বিষয়ে তাদের প্রশ্নের মুখোমুখি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমিও তাদের কাছে জবাব চেয়েছি। আশা করি তারা এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।
আরএ/এসএন