শ্রীপুর ভূমি অফিসে পরিবর্তনের ছোঁয়া, বাড়ছে রাজস্ব আয়

জমির নামজারি নিয়ে সাধারণ মানুষের ভূমি অফিস সম্পর্কে বরাবরই নেতিবাচক ধারণা ছিল। তবে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা ভূমি অফিস সেই চিত্র পাল্টে দিয়েছে। এখন সেবাগ্রহীতারা কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই গড়ে ২২ দিনের মধ্যে নামজারির কাগজ হাতে পাচ্ছেন। এতে সন্তুষ্ট শ্রীপুরের জনগণ। এই কার্যক্রম মানুষের আস্থা ও ভূমি অফিসের প্রতি বিশ্বাস বাড়িয়েছে, পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে দ্বিগুণ হারে।

জানা গেছে, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারি, মিসকেসসহ ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য কার্যক্রমে ছিল ঘুষ দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ। সেবা পেতে মাসের পর মাস ঘুরতে হতো ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসে। এতে একদিকে ছিল ভোগান্তি, অন্য দিকে গুনতে হতো অতিরিক্ত টাকা। তবে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকেই এ ভূমি অফিসে সেবাগ্রহীতারা কোনো ভোগান্তি ছাড়াই নিজের জমির নামজারি করছেন।

২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর এ ভূমি অফিসে যোগদান করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস। যোগদানের পরই তিনি সেবাগ্রহীতাদের জন্য ভূমি অফিসকে উন্মুক্ত করে দেন। অফিসের দেয়ালে লেখা টাঙিয়ে দেন অফিস কক্ষে প্রবেশে এবং বসতে কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। এছাড়া নিজের ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে প্রত্যেক সেবাগ্রহীতার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। যেখানে লেখা, দালার থেকে দূরে থাকুন। এছাড়া সেবাগ্রহীতাদেরকে বলা হচ্ছে, যেকোনো সময় প্রয়োজনে ফোন করলে সেটি রিসিভ করা হবে। ফলে সেবাগ্রহীতারা নিঃসংকোচে নামজারিসহ অন্যান্য কাজ করে যাচ্ছেন।

পাশাপাশি সরাসরি এই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে পারছেন তারা। আর এ কারণে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ভূমি অফিস সম্পর্কে ধারণা বদলে গেছে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে দ্বিগুণ।

এই ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা মামুন মৃধা নামে এক ব্যক্তি বলেন, বিগত দিনে আমি এ অফিসে জমির নামজারির বিষয়ে যখন আসছি তখন অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু গুঞ্জন স্যার এ অফিসে যোগাদানের পরে একটা জমির নামজারি করেছি আমার কোনো ভোগান্তি হয়নি। তাছাড়া ভূমি অফিসে কর্মরত সব স্টাফদের আচরণ আমার ভালো লেগেছে। তাদের সেবায় আমি সন্তুষ্ট।

শ্রীকোল গ্রামের বাসিন্দা বকুল হোসেন বিশ্বাস বলেন, আমি দীর্ঘদিন জমিজমা সংক্রান্ত কাজে এ অফিসে এসেছি। তবে বর্তমানে অফিসের পরিবর্তন দেখে ভালো লাগছে। এসিল্যান্ড আমাদের প্রত্যেকের কাছে তার মোবাইল নাম্বার দিয়েছেন। তার কাজকর্মে আমরা সন্তুষ্ট।

তারাউজিয়াল গ্রামের বাসিন্দা শাহনেওয়াজ বলেন, এ অফিসে এসে আমি আমার নিজের একটি জমির নামজারি করেছি। খুব স্বস্তির সঙ্গে কাজটা করতে পেরেছি। সরকার নির্ধারিত ফি ব্যতিত অতিরিক্ত টাকা লাগেনি।

উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী পলাশ কুমার কুন্ডু বলেন, আমাদের নতুন স্যার আসার পরে এই উপজেলার মানুষ দ্রুততার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করতে পারছে। বিশেষ করে নামজারি ও মিসকেসগুলো যেগুলো হওয়ার মতো সেগুলো দ্রুতই সমাধান করে দেওয়া হয়। আমাদের ভূমি উন্নয়ন কর, ডিসিআর ফিসসহ অন্যান্য সরকারি রাজস্ব আদায় বেড়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, আমি শ্রীপুরে যোগদানের পর থেকেই সেবাগ্রহীতাদের সেবা সঠিকভাবে পাওয়ার জন্য অফিসকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। চেষ্টা করছি তারা যেন এসে ঘোরাঘুরি বা হয়রানির শিকার না হয় এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা মূলক সেবা নিশ্চিত করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আগে শ্রীপুরে নামজারির গড় দিন ছিল ৫০ দিন। আর এখন সেটা হয়েছে ২২ দিন। এছাড়া আমার যোগদানের আগে তিন থেকে চার মাসে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ছিল ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ থেকে ৩৩ লাখ টাকা। আশা করছি মানুষের মধ্যে একটা সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

শুধু শ্রীপুর উপজেলা ভূমি অফিস নয়, দেশের প্রতিটা সেবা প্রদানকারী সরকারি অফিসে যদি সেবাগ্রহীতারা ভয়হীনভাবে প্রবেশ করতে পারে, সে ক্ষেত্রে সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এমনটাই মনে করেন মাগুরাবাসী। 

আরএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ