ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ অনেক পুরনো ব্যাপার। শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে বেপরোয়াভাবে নিজেদের স্বার্থসুবিধা মতো কারখানা চালান কর্মকর্তারা।

অবশেষে শ্রম আইনের বিধান না মানায় কোম্পানির লিফ কারখানার চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (৩০ এপ্রিল) খুলনা শ্রম আদালতে মামলাটি করা হয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কুষ্টিয়া অফিসের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) ফারজুন ইসলাম এ মামলা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার অফিসের উপমহাপরিদর্শক ফরহাদ ওহাব।

মামলার আসামিরা হলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিশা আব্রাহাম, হেড অব অপারেশনস জর্জ লুইস মার্সেডো, সেক্রেটারি এবং সিনিয়র লিগ্যাল কাউন্সেল সৈয়দ আফজাল হোসেন, কোম্পানির কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত লিফ ফ্যাক্টরির প্লান্ট ম্যানেজার মুকিত আহমেদ চৌধুরী।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মামলার বাদী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার অফিসের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) ফারজুন ইসলাম ও আসামি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার চৌড়হাস লিফ ফ্যাক্টরির প্ল্যান্ট ম্যানেজার মুকিত চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার অফিসের উপ-মহাপরিদর্শক ফরহাদ ওহাব বলেন, শ্রম আইনের বিধান না মানায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। খুলনা শ্রম আদালতে মামলাটি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক বছর ধরে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে আসছেন শ্রমিকরা। গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) থেকে ২২ দফা দাবিতে কুষ্টিয়ায় বিএটি লিফ ফ্যাক্টরির শতাধিক মৌসুমি শ্রমিক বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আজ পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। টানা এক সপ্তাহ ধরে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত লিফ ফ্যাক্টরির গেটের সামনে তারা এই কর্মসূচি পালন করছেন। দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ফ্যাক্টরির গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা বলেন, আমরা বিএটিবির মৌসুমি শ্রমিক। আমরা ২২ দফা দাবি আদায়ে অনেক আগে থেকে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও দাবি মানা হয় না। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৭ এপ্রিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।

আন্দোলনকারী মৌসুমি শ্রমিক শামিম উল আলিম বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর কুষ্টিয়া চৌড়হাস লিফ ফ্যাক্টরি অফিসের কর্মকর্তারা কোনো আইন মানেন না। তারা শ্রম আইন মানেন না। নিজেদের মনমতো ফ্যাক্টরির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের ঠকিয়ে তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। আমরা ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা যৌক্তিকভাবে ২২ দফা দাবি জানিয়ে আসলেও ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির কর্মকর্তারা নানা টালবাহানা করে আমাদের কোনো দাবি মানেননি। আমরা চরমভাবে বঞ্চিত। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ফ্যাক্টরি চলতে দেব না। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে, প্রতি বছর বছর নিয়োগপত্র দেওয়া বন্ধ করে এক নিয়োগপত্র দিতে হবে। কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ মুনাফা শ্রমিকদের দিতে হবে। প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা দিতে হবে। শ্রমিকের ঝুঁকি বিমা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নিশ্চিত করতে হবে ইত্যাদি।

অবস্থান কর্মসূচি পালন করা শ্রমিকদের হাতে দাবি সম্বলিত ব্যানারসহ বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ছিল। ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে তারা কারখানার প্রধান ফটক ও আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। তারা ‘শ্রম দিলাম, টাকা কই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

আরআর/এসএন

Share this news on: