দ্রুত উত্তেজনার মধ্যেই দামেস্কে ইসরাইলি হামলা, প্রাণ গেল ১৬ জনের

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। বুধবার ভোরের এই হামলায় কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছে। ইসরাইলের দাবি, তারা এমন একটি ‘চরমপন্থি গোষ্ঠী’কে লক্ষ্য করে হামলাটি চালিয়েছে।

ওই ‘চরমপন্থি গোষ্ঠী’ রাজধানীর দক্ষিণ-পশ্চিমের সাহনায়া এলাকায় আরব দ্রুজ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে অভিযোগ ইসরাইলের।

তবে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সাহনায়া এলাকায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে পরিচালিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে।

বুধবার সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানার বরাত দিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে আল-আরাবিয়া।

ইসরাইলের ভাষ্যমতে, তারা বুধবার ভোরে সিরিয়ায় একটি অভিযানে অংশ নেয়। এ অভিযানের লক্ষ্য ছিল দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিতে থাকা একটি গোষ্ঠী। এ সময় সাহনায়ায় সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও তথাকথিত কয়েকটি ‘নিষিদ্ধ গোষ্ঠী’র মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে।

তবে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘সাহনায়ায় নিষিদ্ধ গোষ্ঠীগুলো যখন বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, তখন ১৬ জন নিহত হন’।

সাহনায়া এলাকাটি মূলত দামেস্ক শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এবং সেখানে মূলত দ্রুজ ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের বসবাস।

উল্লেখ্য, দ্রুজদের মূল আবাসভূমি মূলত সিরিয়া-লেবানন। ইসরাইল ও জর্দানে দ্রুজ ধর্মকে আলাদা ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। কারণ এই ধর্মের ভিত্তিমূল মূলত ইসলাম। দ্রুজ ধর্ম মূলত শিয়া মুসলিমদের একটি শাখা।
এদিকে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় সিরিয়ার নতুন নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য নিহত হয়েছেন।

তবে ইসরায়েলের দাবি, তারা সাহনায়ায় দ্রুজ জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার প্রস্তুতি নিতে থাকা একটি চরমপন্থি গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছিল।

এ বিষয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আইডিএফ (ইসরাইলি সেনাবাহিনী) তাদের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে সাহনায়ায় দ্রুজ জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার প্রস্তুতিতে থাকা একটি চরমপন্থি সংগঠনের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে’।

তিনি আরও জানান, ‘সিরিয়া সরকারকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে—দ্রুজ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে’।

যদিও সিরিয়ার পক্ষ থেকে নেতানিয়াহুর দাবিকে অস্বীকার করে বলা হয়েছে, এটি ছিল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার সংঘর্ষ।

সংবাদ সংস্থা সানার বরাত দিয়ে বলা হয়, সাহনায়ায় মঙ্গলবার ভোর রাতে একটি নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে হামলা হয়। এতে তিনজন নিরাপত্তা সদস্য আহত হন। এছাড়া অন্যান্য স্থানে নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক যানবাহনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।

সিরীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আলি আল-রিফাই জানান, নিহতদের মধ্যে পাঁচজন নিরাপত্তা কর্মী এবং ছয়জন দারার বাসিন্দা। ঘটনার সময় তারা একটি গাড়িতে ছিলেন এবং সেটি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।

এ নিয়ে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘যারা সিরিয়ার নিরাপত্তা অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে লৌহ মুষ্টিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে’।

এদিকে এর আগের রাতে দামেস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দ্রুজ ও খ্রিস্টান অধ্যুষিত জারামানায় একটি প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়। দ্রুজ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির নামে প্রচারিত কথিত ধর্ম অবমাননামূলক অডিও রেকর্ডিংকে কেন্দ্র করে এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

তবে মঙ্গলবার পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। কারণ সিরিয়া সরকার দ্রুজ নেতাদের আশ্বস্ত করেছে যে, সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিচার করা হবে।

পাশাপাশি জোলানির সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছে, ‘সাম্প্রদায়িক ও আঞ্চলিক বিভাজন উসকে দেওয়া অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

জারামানায় সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে সিরীয় সরকার জানিয়েছে, ‘সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে এবং স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে’।

আরআর/এসএন

Share this news on: