রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা, হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা, এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো—প্রোটিন শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রোটিনের পরিমাণ ঠিকমতো না খেলে শরীরে নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে ঠিক কতটা প্রোটিন দরকার, তা জানেন কি?
২০২৪ সালের নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৮ থেকে ১ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। তবে বাস্তবে কেউ এই পরিমাণের বেশি প্রোটিন খান, আবার কেউ কম। পুষ্টিবিদ মঞ্জিরা সান্যাল বলেন, ‘কারও শরীরে কতটা প্রোটিন প্রয়োজন, তা নির্ভর করে চারটি বিষয়ের ওপর—বয়স, লিঙ্গ, ওজন এবং শারীরিক কর্মকাণ্ড।’
প্রোটিনের চাহিদা কীভাবে নির্ধারণ করবেন?
সাধারণত, যাদের জীবনযাপন sedentary (অল্প শারীরিক পরিশ্রম) তারা প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৮ থেকে ১ গ্রাম প্রোটিন খাবেন। যারা মাঝারি পরিমাণে শারীরিক কসরত করেন, তাদের ১ থেকে ১.৪ গ্রাম (প্রতি কেজি) প্রোটিন দরকার। আর যারা প্রতিদিন ভারী ব্যায়াম বা শারীরিক কসরত করেন, তাদের ১.৬ গ্রাম (প্রতি কেজি) প্রোটিন প্রয়োজন। খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেও একই পরিমাণ প্রোটিন দরকার, এবং যারা ভারোত্তোলন করেন তাদের ১.৫ থেকে ২.২ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, এসব প্রোটিনের পরিমাণ মাপা সহজ নয়, তবে সাধারণ খাবারের মাধ্যমেই শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
খাবারের মাধ্যমে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ
পুষ্টিবিদ শ্রেয়সী ভৌমিক জানান, ‘প্রতিদিনের খাবারে প্রোটিন ভাগ করে নেওয়া উচিত। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক প্রোটিন চাহিদা যদি ৪৫ গ্রাম হয়, তা বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে ভাগ করে নেওয়া যায়। মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যগুলোর মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।’
পুষ্টিবিদ মঞ্জিরা এবং শ্রেয়সীর মতে, সাধারণ ডাল, মাছ, মাংস, ডিম এবং দুধ যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন সরবরাহ করতে পারে। তবে, বাজারে ভেজাল খাবারের উপস্থিতি এবং গুণগত মানের হ্রাসের কারণে অনেকেই প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সঠিক পরামর্শ ছাড়া প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে।
প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের ব্যবহারে সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রোটিন সাপ্লিমেন্টে সাধারণত অতিরিক্ত শর্করা থাকে, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খেলে কিডনির ওপর চাপ পড়তে পারে এবং শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা ক্ষতিকর হতে পারে। প্রাক্তন বিসিসিআই ফিটনেস কোচ চিন্ময় রায় বলেন, ‘পুষ্টিবিদ বা প্রশিক্ষকের পরামর্শ ছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিৎ নয়। রোজকার খাবারে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ সম্ভব।’
পুষ্টিবিদরা বলেন, সঠিক পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করতে হলে সাধারণ খাবারের মাধ্যমেই এটি পাওয়া সম্ভব। তাই, খাদ্য তালিকায় মাছ, মাংস, ডাল, ডিম, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য রাখতে হবে। তবে, সঠিক পরামর্শ ছাড়াই প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
আরএ/টিএ