মঞ্চে মধ্যমণি কাঙালিনী সুফিয়া

বার্ধক্য দমাতে পারেনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বাউলশিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া। শরীরে নানান রোগে বাসা বেঁধেছে। তবুও মঞ্চে উঠে গান গেয়ে মঞ্চ মাতালেন এই প্রবীণ শিল্পী। বয়স হলেও, এখনো নেচে নেচে গান করেন সুফিয়া। তার কণ্ঠের জাদু এখনো অক্ষত।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার কল্যাণপুর বিলপাড়া গ্রামে ‘কাঙালিনী সুফিয়া একডেমি ও জাদুঘর’ উদ্বোধন শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি গান পরিবেশন করেন। এসময় তার গানে মুগ্ধ হয় দর্শকরা।

জানা গেছে, মাত্র ১৪ বছর বয়স থেকে গান গেয়ে আসছেন দেশ আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন বরেণ্য শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া। রচনা করেছেন প্রায় ৫ শতাধিক গান। গতকাল বুধবার রাতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুর বিলপাড়া গ্রামে উদ্বোধন করা হয় ‘কাঙ্গালিনী সুফিয়া একাডেমি ও জাদুঘর’। একচালা টিনের ঘরে একাডেমি উদ্বোধনের সময় দেশের ১৩টি জেলা থেকে আসেন শতাধিক বাউল শিল্পীরা। একাডেমি চত্বরে সারারাত চলে বাউল গানের আয়োজন। গান শুনতে আসেন হাজার হাজার দর্শক শ্রোতা। দীর্ঘদিন পর এমন একটি একাডেমি ও জাদুঘর স্থাপনে খুশি দেশের বাউল শিল্পীরা। একডেমিতে কাঙালিনী সুফিয়ার বিভিন্ন গানের বই, বাদ্যযন্ত্রসহ বিভিন্ন পুরস্কার স্থান পেয়েছে।

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া গ্রামে জেলে পরিবারে কাঙালিনী সুফিয়ার জন্ম। তার প্রকৃত নাম টুনি হালদার। ১৪ বছর বয়সেই গ্রামের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে মানুষের নজর কাড়েন তিন। একসময় তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনেরও নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। তার গানের গুরু গৌর মহন্ত ও দেবেন খ্যাপা। হালিম বয়াতির কাছেও গান শিখেছিলেন। এ পর্যন্ত ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। কোনবা পথে নিতাইগঞ্জ যাই’, ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না’, ‘আমার ভাটি গাঙের নাইয়া’ সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের শিল্পী তিনি।

দীর্ঘদিন পর একডেমি ও জাদুঘর উদ্বোধনে খুশি দেশ বরেণ্য শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া। তিনি বলেন, আমি মরে গেলেও যেনো এই একাডেমিটা থাকে। সরকারের মাধ্যমেই থাকবে, সরকারই চালাবে। এখানে একটি কমিটি গঠন করা হবে। একটি ইলেকশনের মাধ্যমে যে পাশ করবে সে এই একাডেমির সেক্রেটারি হবে। এটিই আমার পরিকল্পনা। আমার এই একাডেমিটা যেনো সরকার ভালো করে তৈরি করে দেই এটাই আমার দাবি।

কাঙালিনী সুফিয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে প্রশাসন সব সময় কাজ করবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, কাঙালিনী সুফিয়া শুধু রাজবাড়ীর না, সে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য। আমাদের শিক্ষা সংস্কৃতি বা কালচার আমরা এখনো সেভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনি বা শিখিনি। যে কারণে তার মতো মানুষরা যে অবস্থায় আছে যতটা সম্মান তারা প্রাপ্য আমরা সেটা দিচ্ছি, কিন্তু তার থেকে আরও বেশি তারা প্রাপ্য ছিল। রাজবাড়ীর ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার মতো মানুষ সব সময় থাকবে। তাকে আমরা দেখেছি। তার আঙিনায় এসে পা রাখার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের। আমি মনে করব এটা আমাদের জীবনের একটি অনন্য প্রাপ্য।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, কাঙালিনী সুফিয়া আমাকে অনেকগুলো অনুরোধ করেছেন। জেলা প্রশাসক হিসেবে আমি চেষ্টা করব আমার সাধ্যের ভেতর থেকে তার অনুরোধগুলো রাখার। কাঙ্গালিনী সুফিয়া একজন গুণী শিল্পী। কাঙালিনী সুফিয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে আমরা জেলা প্রশাসন তার পাশে সবসময় আছি।

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মববাজি দিয়ে দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার মেনে নেব না: জিএম কাদের May 01, 2025
ভালো ও খারাপ মুহূর্তে যা করবেন May 01, 2025
img
সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি করে সরকারের একটি অংশ বিরোধ উসকে দিতে চায় : তারেক রহমান May 01, 2025
প্রেক্ষাগৃহ কাঁপাচ্ছে ঈদের ৪ সিনেমা May 01, 2025
চেন্নাইয়ের বিদায়, ক্রিকেট থেকে অবসরের ইঙ্গিত দিলেন ধোনি! May 01, 2025
আফ্রিদির ভাইকে হত্যা করেছে বিএসএফ, আসাদউদ্দিন ওয়াইসির স্বীকারোক্তি! May 01, 2025
শিখর-সাকিবের পর মাগুরার হাল ধরছে কে? May 01, 2025
img
দীপু মনির প্যারোলে মুক্তির আবেদন নিয়ে যা বললেন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল May 01, 2025
পুরুষকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার দুই নারী! May 01, 2025
ঘুষ খাওয়ার চেয়ে শশুর বাড়ি থাকা ভালো বললেন সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা May 01, 2025