বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে বগুড়ার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প। এখানে আগুনে গলিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আধুনিক কৃষিযন্ত্রের যেসব যন্ত্রাংশ একসময় শুধুই চীন থেকে আমদানি করা হতো।
মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে বগুড়ায় উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রপাতি এখন চীনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি হচ্ছে। ৯০-এর দশকে কয়েকটি হাতেগোনা কামারশালায় সেচ পাম্পের ছোট ছোট যন্ত্রাংশ তৈরির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিল এই শিল্প।
আজ সেই শিল্প বিস্তৃত হয়ে প্রায় ৬০০টির বেশি কারখানায় রূপ নিয়েছে। শহর ও শহরতলির চারপাশে গড়ে ওঠা এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে ২৮০০ থেকে ৩০০০ দক্ষ শ্রমিকের। এসব কারখানায় ধান কাটার যন্ত্র, জৈবসার কাটার মেশিন, সাইলেন্সার, জুট মিল, ময়দা মিল, সিমেন্ট মিলসহ প্রায় ২০০০ ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে, যার বাৎসরিক টার্নওভার তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা।
শুধু কৃষি যন্ত্রপাতিই নয়, বগুড়ার ওয়ার্কশপগুলোতে তৈরি হচ্ছে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, সিমেন্ট মিল ও জুট মিলে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রাংশও। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে এই শিল্প এখন আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রবেশ করছে, ফলে মাসে লাখ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। সাবমার্সিবল পাম্পের মতো চীন থেকে আমদানি করা অনেক পণ্যের ৮০ শতাংশ এখন বগুড়াতেই তৈরি হচ্ছে, যা আমদানি নির্ভরতা কমিয়েছে এবং কৃষকদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
তবে সম্ভাবনাময় এই শিল্প বর্তমানে নানা সংকটে ভুগছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে, অথচ পণ্যের বাজারমূল্য তেমন বাড়েনি। এতে উদ্যোক্তারা লাভের পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় পণ্যের কস্টিং অনেক সময় বিদেশি পণ্যের চেয়েও বেশি পড়ছে। ফলে অনেক উদ্যোক্তা প্রোডাকশন কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
শিল্পের বিকাশে উদ্যোক্তারা সরকারের কাছে প্রশিক্ষিত শ্রমিক তৈরির উদ্যোগ, সহজ শর্তে ঋণপ্রদান, আধুনিক প্রযুক্তির সরবরাহ এবং নির্দিষ্ট শিল্পাঞ্চলে কারখানা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এবং চীন বা ভারতের ওপর নির্ভরতা ছাড়াই দেশের কৃষি ও শিল্প খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে দেশের সম্ভাবনাময় এই লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা হারাবে এবং উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
আরএ/টিএ