জেলা প্রশাসনের অনুমতি না থাকলেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের জমিতে জাঁকজমকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে কোটি টাকার বাণিজ্য মেলা। চারপাশ টিন দিয়ে ঘেরা মাঠে অর্ধশতাধিক স্টল গড়ে তোলা হয়েছে, যেগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে চড়া দামে। নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় তোরণ, যার দুই পাশে রয়েছে টিকিট কাউন্টার। মেলায় প্রবেশের জন্য প্রতিজন দর্শনার্থীকে গুনতে হচ্ছে ১০ টাকা প্রবেশমূল্য।
গত বৃহস্পতিবার (০১ মে) চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের জমিতে এই মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলাস্থলে করা হয়েছে লাইটিং, চলছে সার্কাস ও বিভিন্ন রাইড। জমজমাট চলছে বেচাকেনা। মেলায় প্রবেশের জন্য ভরাট করা হয়েছে সরকারি খাল, বৃষ্টি হলেই পানি জমে প্লাবিত হবে বিশাল এলাকা, মহাসড়কে বিঘ্ন হচ্ছে যান চলাচল। মেলা মাঠের পাশেই রয়েছে আরেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাশিমপুর মকবুলিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পায়রা নামক সংগঠনের ব্যানারে আলী ইমরান নামের এক ব্যক্তি মার্চ মাসের শুরুর দিকে মাসব্যাপী মেলার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলেও মেলেনি অনুমতি। তবে জেলা প্রশাসক অনুমতি দিয়েছেন এমন মিথ্যা তথ্যে ছড়িয়ে কোটি টাকা আয় করবেন প্রভাবশালী আলী ইমরান। তার খুঁটির জোর নিয়েও চর্চা চলছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
মেলার অনুমতির আবেদনকারী আলী ইমরান জানান, জেলা প্রশাসক অনুমতি দিয়েছেন। অনুমতির কাগজ দেখতে চাইলে তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
জনদুর্ভোগের বিষয় নিশ্চিত করে চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, এসএসসি পরীক্ষার মাসে কলেজ, মাদ্রাসা ও মহাসড়কের পাশে অনুমতি বিহীন মেলা ও সরকারি খাল ভরাটের কারণে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চন্দনাইশ থানার ওসি মো. নুরুজ্জামান জানান, মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ অনুমতির কোনো কাগজপত্র দিতে পারেনি। তবে কোনো সমস্যা হলে দায় পুলিশের ওপর আসবে তাই মেলায় পুলিশ টিম নিয়োজিত রেখেছি।
সরকারি কলেজের জায়গায় মেলার ব্যাপারে গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রনজিৎ কুমার দত্তকে একাধিকবার কল ও মেসেজ দেয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মেলার মাঠ কলেজের জায়গা বলে নিশ্চিত করেছেন গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. সুব্রত বরণ বড়ুয়া।
চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিব হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে অনুমতির আবেদন করেছেন। আমি বিধি মোতাবেক রিপোর্ট প্রদান করেছি। বৃহস্পতিবার মেলা উদ্বোধন হয়েছে বলে শুনেছি। তবে অফিসিয়ালভাবে অনুমতির কোনো কপি আমার হাতে আসেনি।
জেলা প্রশাসকের অনুমতির ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম গণমাধ্যমকে জানান, এরা দুষ্ট চক্র, এ ধরনের কোনো মেলার অনুমতি জেলা প্রশাসন দেয়নি।
টিকে/এসএন