কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) অভাবনীয় অগ্রগতিতে বদলে যাচ্ছে সৃজনশীলতার সংজ্ঞা। চাকরি হারানোর ভয় এখন আর শুধু সাধারণ কর্মীদের নয়— এবার শিল্পী, লেখক কিংবা অভিনেতারাও পড়েছেন একই শঙ্কায়। আর সেই উদ্বেগ যেন আরও বাড়িয়ে দিলেন খ্যাতনামা ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখর কপূর।
সম্প্রতি ‘ওয়েভস ২০২৫’ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ‘ব্যান্ডিট কুইন’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘এলিজ়াবেথ’ খ্যাত এই পরিচালক স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন— অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খানের মতো তারকাদের আর প্রয়োজন নেই তাঁর। কারণ, তিনি নিজেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি করে নিতে পারবেন নিজের মতো ‘তারকা’। এবং সেই চরিত্রের স্বত্ব থাকবে একান্তই তাঁর নিজের।
শেখর কপূর বলেন, “তারকা নয়, এখন শুধু অভিনেতাই থাকবে। তারকা তৈরি করবে কৃত্রিম মেধা। আমি এমন চরিত্র বানাতে পারি যাদের ওপর আমার মালিকানা থাকবে। খুব শিগগির এমন সময় আসবে, যখন সিনেমার নারী-পুরুষ চরিত্র তৈরি হবে AI-এর মাধ্যমে।”
পরিচালক আরও জানান, ইতোমধ্যে ইন্টারনেটজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বহু ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সার— যারা আদতে মানুষই নয়, বরং পুরোপুরি কৃত্রিম। ভবিষ্যতে তারাই বড় পর্দায়ও জায়গা করে নিতে পারে, এমনটাই বিশ্বাস তাঁর।
“আমার অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খানের প্রয়োজন নেই। আমি নিজেই তাদের মতো চরিত্র বানিয়ে নিতে পারব। যদি আমি যথেষ্ট দক্ষ হই, তবে দর্শকও সেই চরিত্রকে গ্রহণ করবে, ভালোবাসবে,”— বলেন তিনি।
তাঁর এই বক্তব্য এমন সময় এলো, যখন বলিউডে তারকাদের অতি উচ্চ পারিশ্রমিক নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, অযৌক্তিক পারিশ্রমিকের ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে পুরো ইন্ডাস্ট্রির কাঠামো। পারিশ্রমিকের বৈষম্যও এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে শেখরের বক্তব্য নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে। তবে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার নিয়েও সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, মানুষের আসল শক্তি হলো— অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হওয়ার সাহস। “রহস্য আর অনিশ্চয়তা মানুষকে সামনে এগিয়ে নেয়। তাই কৃত্রিম মেধা ব্যবহার করলেও সংযম জরুরি,”— বলেন শেখর।
প্রযুক্তির এই নতুন যুগে সৃজনশীলতা ও বাস্তবতার ভারসাম্য রক্ষা করাই হয়ে উঠছে নতুন চ্যালেঞ্জ। আর তাতে প্রযুক্তি না মানুষ— কে টিকবে, সেটা সময়ই বলে দেবে।
আরএ/এসএন