ভারতের রাজস্থান রাজ্যের দুর্নীতি দমন ব্যুরো (এএসবি) রোববার ভারত আদিবাসী পার্টির (বিএপির) বিধায়ক জয়কৃষ্ণ প্যাটেলকে গ্রেফতার করেছে। নিজের সরকারি বাসভবনে এক খনির মালিকের কাছ থেকে ২০ লাখ রুপি ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে গ্রেফতার হন তিনি।
এএসবির মহাপরিচালক (ডিজি) রবি প্রকাশ মেহারদা জানান, ‘৪ এপ্রিল খনিমালিক রবীন্দ্র সিংয়ের করা এক অভিযোগের ভিত্তিতে বিধায়ককে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। রবিবার ফাঁদ পেতে বিধায়ককে হাতেনাতে ধরা হয়।
এটাই রাজস্থানে প্রথমবার, যখন কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত বিধায়ক ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়লেন।’
তিনি আরো জানান, করৌলির জেলার তোদাভিম নির্বাচনী এলাকায় খনিসংক্রান্ত তিনটি প্রশ্ন গত বিধানসভা অধিবেশনে তোলার পর সেগুলো বাতিল করার জন্য প্যাটেল অভিযোগকারীর কাছে ১০ কোটি রুপি দাবি করেছিলেন।
মেহারদা বলেন, ‘এই প্রশ্নগুলো ছিল খনি ইজারাসংক্রান্ত। প্রশ্ন জমা দেওয়ার পর প্যাটেল অভিযোগকারী সিংয়ের কাছে গিয়ে প্রশ্নগুলো বাদ দিতে ১০ কোটি রুপি দাবি করেন।
পরে আলোচনার মাধ্যমে ঘুষের অঙ্ক দুই কোটিতে নির্ধারণ করা হয় এবং তা কিস্তিতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিং আগে এক লাখ রুপি বাঁশওয়ারা এলাকায় গিয়ে প্যাটেলকে দিয়েছিলেন।’
এবার রবিবার দেওয়া হচ্ছিল দ্বিতীয় কিস্তি, তখনই এএসবি প্যাটেলকে তার জয়পুরের জ্যোতি নগরের সরকারি বাসভবন থেকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। মেহারদা বলেন, ‘আমরা রবিবার অভিযানের পরিকল্পনা করি।
বিধানসভার স্পিকার বাসুদেব দেবনানি ও মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মার পূর্বানুমতি নিয়ে এই অভিযান চালানো হয়।’
রবিবার সকালে অভিযোগকারীকে নিয়ে এএসবির একটি দল প্যাটেলের বাসভবনে পৌঁছয়। মেহারদা জানান, ‘তার এক কর্মচারী তাদের ভেতরে নিয়ে যান এবং বিধায়ককে জানান। প্যাটেল তখন অন্য ঘরে অপেক্ষা করছিলেন। পরে ওই কর্মচারী অভিযোগকারীর কাছ থেকে টাকা নেন এবং সেটি বিধায়কের ঘরে দেখাতে নিয়ে যান।
তবে আমাদের দল ঘরের দিকে এগোতেই তিনি অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান।’
এএসবি ডিজি বলেন, অর্থ উদ্ধার করা যায়নি, তবে ওই কর্মচারীকে খুঁজে বের করতে চিরুনি অভিযান চলছে। ‘আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে বিধায়ক ঘুষ নিয়েছেন। পুরো ঘটনার অডিও-ভিডিও রেকর্ড আছে। রঙ পরীক্ষা করে তার আঙুলে টাকার রঙের উপস্থিতিও মিলেছে।’
পরে প্যাটেলকে জহালানা ডুঙ্গরি এলাকায় এএসবি সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়। কর্মকর্তারা জানান, প্যাটেলের নির্বাচনী এলাকা দক্ষিণ রাজস্থানের বানসওয়ারা হলেও তিনি তোদাভিমের খনিগুলোর প্রতি আগ্রহী ছিলেন কেন, তা নিয়ে তদন্ত চলছে এবং এই বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাসভবনের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে কংগ্রেস নেতা মহেন্দ্রজিত সিং মালভিয়া বিজেপিতে যোগ দিয়ে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলে নভেম্বরের উপনির্বাচনে প্যাটেল বিএপি প্রার্থী হিসেবে বাঁশওয়ারার বাগিদোরা আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। কংগ্রেস তাকে সমর্থন দেয় এবং তিনি বিজেপি প্রার্থী সুবাস তাম্বোলিয়াকে পরাজিত করেন। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন প্যাটেল, যেখানে জয়ী হয়েছিলেন মালভিয়া।
বিএপি রোববার এই গ্রেফতারকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছে। দলটির সংসদ সদস্য (এমপি) রাজকুমার রোয়াত বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। আমাদের বিধায়ক একটি বড় ষড়যন্ত্রের শিকার। এখনো স্পষ্ট নয়, কোন দল এই ষড়যন্ত্রের অংশ এবং কেনই বা তারা এই অর্থ দিল। রাজস্থানে এই ধরনের ষড়যন্ত্র কোনো উদীয়মান তৃতীয় শক্তির বিরুদ্ধেই করা হয়।’
আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার ও সমস্যা নিয়ে কাজ করতে বিএপির জন্ম। এটি মূলত গুজরাটে ২০১৭ সালে ছোটুভাই বাসাভার প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টির (বিটিপি) থেকেই তৈরি হয়। পরে এমএলএ রোয়াত ও রামপ্রসাদ দিনডোর বিটিপি ছেড়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিএপি গঠন করেন।
২০২৩ সালের রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে বিএপি তিনটি আসন—চোরাসি, ধারিয়াওয়াদ ও আসপুর—দখল করে প্রথমবার উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি জানায়। পরে ২০২৪ সালের উপনির্বাচনে তারা বাগিদোরা আসনও জিতে নেয়। বর্তমানে বিএপির একজন সংসদ সদস্য ও চারজন বিধায়ক রয়েছেন।
প্যাটেলের গ্রেফতার প্রসঙ্গে রাজস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জওহার সিং বেধাম বলেন, ‘আমাদের সরকার দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। একজন বিধায়কের দায়িত্ব হলো তার এলাকার ও জনগণের উন্নয়ন ভাবনা। কিন্তু একজন বিধায়কের এ ধরনের কাজ রাজ্যের ভাবমূর্তিকে কলুষিত করেছে। এই ধরনের দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো দল বড় বা ছোট নয়। এটি জননির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বের চরম লঙ্ঘন এবং এ ধরনের প্রতিনিধির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসএম