ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে ইন্টারনেট সার্ভার জটিলতায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বাণিজ্য গত এক সপ্তাহ ধরে বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে স্থবিরতা নেমে এসেছে আমদানি বাণিজ্যে। প্রভাব পড়ছে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে সরকারের রাজস্বের ওপর। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রফতানি স্বাভাবিক আছে।
বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, সার্ভার জটিলতায় গত কয়েকদিনে অনেক পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় পেট্রাপোল বন্দরে ও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এ কারণে পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যজট দেখা দিয়েছে। সোমবার (৫ মে) সকাল ১০টা পর্যন্ত কোনো পণ্যবাহী ট্রাক ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেনি। তবে বাংলাদেশ থেকে ১২টি পণ্যবাহী ট্রাক ভারতে গেছে।
গত রোববার একই সমস্যায় সারাদিনে মাত্র ৩৪ ট্রাক আমদানিকৃত কাঁচা মালামাল ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। এর আগের দিন শনিবার ১৫০ ট্রাক পণ্যবাহী ট্রাক ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে রফতানি বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবে চলছে। গত শনিবার ২১৩ ট্রাক এবং রবিবার ১১১ ট্রাক পণ্য নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে।
বেনাপোল বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি ব্যবসায়ীদের। প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি বাণিজ্য ও আট হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়। বছরে এই বন্দর থেকে আমদানি-বাণিজ্যে সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।
মূলত ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার বড় একটি অংশ শিল্প কলকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক ও শিশুখাদ্য। দেশ থেকে রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাট, পাটজাত দ্রব্য ও মাছসহ বিভিন্ন পণ্য। আগে পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশের আগে গেট পাস হতো এনালগ প্রক্রিয়ায় হাতে-কলমে। পরে বাণিজ্যে আধুনিকতা আনতে দুই দেশের মধ্যে অনলাইনে গেট পাস অ্যান্ট্রি চালু করে কাস্টমস ও বন্দর। কিছুদিন পরপর পেট্রাপোলে সার্ভার জটিলতা দেখিয়ে আমদানি বাণিজ্য বন্ধ করে রাখা হয়।
এদিকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক স্বাভাবিকভাবে বন্দরে প্রবেশ করতে না পারায় দেশের শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহতের পাশাপাশি লোকসান হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। পেট্রাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল থেকে ভারতের শুল্ক দফতরের সার্ভারে জটিলতা দেখা যাচ্ছে। ঠিকমতো ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে না। এ সংকট দ্রুত সমাধানের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের হস্তক্ষেপ চেয়ে ই-মেইল পাঠিয়েছে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, পেট্রাপোল কাস্টমস ও বন্দরে ইন্টারনেট সার্ভিস টাটা কোম্পানি দিয়ে থাকে। গত ২৮ এপ্রিল দুপুরে ঝড়ের পর ইন্টারনেটে সমস্যা দেখা দিয়েছে। টাটার কলকাতা অফিস সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। এখন দিল্লির ডি জি সিস্টেম মনিটরিং করছে বিষয়টি। কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ অনলাইন সিস্টেমের বিকল্প হিসেবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কিছু পণ্য ছাড় করছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান বলেন, ‘সাধারণত প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়। রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে মাত্র ৪৬ ট্রাক এবং রফতানি হয়েছে ১২৮ ট্রাক পণ্য। ২৮ এপ্রিল থেকে পণ্য আমদানি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম। এর প্রভাবে বাংলাদেশের শিল্প-কলকারখানায় কাঁচামাল সংকট দেখা দিয়েছে। সার্ভার জটিলতা না কাটলে পণ্য স্বাভাবিকভাবে আমদানি হবে না।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক মামুন কবির তরফদার বলেন, ‘পেট্রাপোল বন্দরে ইন্টারনেট না থাকায় তারা কাজ করতে পারছেন না। অনলাইনের বিকল্প হিসেবে ট্যাবে ওয়াইফাই কানেকশন দিয়ে নামমাত্র কার্যক্রম চালু রেখেছে পেট্রাপোল কাস্টমস ও বন্দর। সে দেশের বন্দরে দেড় হাজারের বেশি পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে।’
আরএম/এসএন