এই মুহূর্তে দরকার নেই প্রাদেশিক সরকার, দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণঃ সারোয়ার তুষার

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষারের আজকের বক্তব্যে উঠে এসেছে একটি স্পষ্ট বার্তা—বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোয় সময়োচিত ও মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা। জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের বিরতিতে তিনি যে নয়টি মূল প্রস্তাব উত্থাপন করেন, তা রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতান্ত্রিকীকরণ, জবাবদিহিতা এবং বিকেন্দ্রীকরণের সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়।

সরোয়ার তুষারের বক্তব্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অংশ ছিল ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে অবস্থান। সরকারি দলভুক্ত সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারে তারা যে অবস্থান নিয়েছে, তা বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থায় বিরল এবং সাহসী। অর্থবিল ও অনাস্থা ভোট ছাড়া সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোটদানের সুযোগের দাবির মধ্য দিয়ে সরকার ও সংসদের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার পথ দেখিয়েছে এনসিপি।

গণভোটের বিধান সংযোজন, বিশেষ করে "পাওয়ার স্ট্রাকচার" ও "প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা" সংক্রান্ত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রস্তাবটি আরও একধাপ এগিয়ে গেছে। এ প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রকে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রে রূপান্তরের সম্ভাবনা তৈরি করে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রস্তাব, এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ক্ষমতা ও জবাবদিহি নিয়ে স্পষ্ট মতামত, বিচার বিভাগের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকা প্রয়োজনীয়তাকেই তুলে ধরে।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলা গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান নিয়ে এনসিপির দ্বিমত এবং বিচারিক ক্ষমতা শুধু বিচার বিভাগের হাতেই রাখার দাবি, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার পার্থক্যকে স্পষ্ট রাখার পক্ষে এক দৃঢ় অবস্থান।

নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহিতা নিয়ে তাদের অবস্থান রাজনীতির অপব্যবহার থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে জবাবদিহিতা আনার প্রস্তাব রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের একটি সুপরিকল্পিত রূপরেখা।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজে স্থানীয় প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব রাষ্ট্রক্ষমতায় বিকেন্দ্রীকরণের গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশ করে।

প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের বিরোধিতা এবং পরিবর্তে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পক্ষে এনসিপির অবস্থান একটি বাস্তবতাভিত্তিক ও খরচসাশ্রয়ী দৃষ্টিভঙ্গি। একইসঙ্গে, জেলা ও উপজেলা পরিষদের রদবদলের বিপক্ষে অবস্থান স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দেয়।

স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বিলোপের প্রস্তাব রাজনীতির সহিংসতা ও বিভাজনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, যা রাজনৈতিক সংস্কৃতির পুনর্গঠনে সহায়ক হতে পারে।

১০০টি নারী আসনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং উচ্চকক্ষে ২৫% নারী সংরক্ষণের প্রস্তাব, রাজনীতিতে নারীর কার্যকর অংশগ্রহণের প্রতিফলন। অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারীদের প্রতি বছর সম্পদের হিসাব দেওয়ার প্রস্তাব প্রশাসনিক স্বচ্ছতার নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে।

এনসিপির উত্থাপিত প্রস্তাবনাগুলো শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং একটি সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ রূপরেখার ইঙ্গিত দেয়। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য, সাংবিধানিক সংশোধন ও বৃহৎ মাত্রার প্রশাসনিক উদ্যোগ প্রয়োজন হবে।

যদিও কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথে রাজনৈতিক বাধা আসতে পারে, তবে আলোচনার টেবিলে এই বিষয়গুলোর উপস্থাপন, অন্তত নীতিগত সংস্কারের একটি শুভ সূচনা বলা যায়।


টিকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
চাঁদপুরে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ৩ জন গ্রেফতার May 07, 2025
img
জমিতে প্রস্রাব করার ঘটনায় দুজনকে কুপিয়ে জখম, বাড়িঘরে হামলা May 07, 2025
img
নোয়াখালীতে মসজিদের সামনে ইমামকে বেধড়ক পিটুনি May 07, 2025
img
লাওস সীমান্তে সংঘর্ষ, বন্ধ হল থাইল্যান্ড পর্যটন স্পট May 07, 2025
img
বোলিংয়ের মাঝেই হার্ট অ্যাটাক, প্রাণ হারালেন হাসপাতালে May 07, 2025
img
১৬শ কোটি টাকা পাবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাজয়ী দল May 07, 2025
img
মায়ের কোল থেকে নিয়ে শিশুকে দেড় লাখে বিক্রি করলেন বাবা May 07, 2025
img
অনুমতি ছাড়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী গ্রেফতার না করার সুপারিশ কমিশনের May 07, 2025
কাশ্মির ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক May 06, 2025
দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে ‘সেকেলে’ আখ্যা দিয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা May 06, 2025