এই প্রথম পূর্বশর্ত না রেখে সংলাপের প্রস্তাব দিলেন পুতিন

এই প্রথম কোনো পূর্বশর্ত না রেখে ইউক্রেনের সরকারের সঙ্গে সরাসরি শান্তি সংলাপ শুরুর প্রস্তাব দিয়েছেন পুতিন। রোববার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন থেকে দেওয়া এক বার্তায় পুতিন বলেছেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কিয়েভকে অবহিত করা হয়েছে।

পুতিন বলেছেন, “আমরা কিয়েভের সঙ্গে সরাসরি শান্তি সংলাপ শুরু করতে আগ্রহী এবং এক্ষেত্রে আমরা কোনো প্রকার পূর্বশর্ত রাখছি না। গত বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলে কিয়েভের প্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।”

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট চান, দুই দেশের প্রতিনিধিদের সম্ভাব্য সংলাপ তুরস্কে হোক। এই সংলাপই শেষ পর্যন্ত দুই দেশেকে যুদ্ধবিরতির দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলেন বলেও জানিয়েছেন পুতিন।

“আমাদের প্রস্তাব টেবিলের ওপর আছে। এখন এটা ইউক্রেনের সরকার এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের ওপর নির্ভর করছে, যারা সম্ভবত জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা দ্বারা চালিত হয়।”

মিনস্ক চুক্তির শর্ত মেনে কৃষ্ণ সাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান না করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ইউক্রেনের তদবিরকে ঘিরে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। পুতিন নিজে এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তারপর ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে। এই তিন বছরে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া ও খেরসন— চার প্রদেশের দখল নেয় রুশ বাহিনী। এই চার প্রদেশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক পঞ্চমাংশ।

গত ৩ বছরে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির জন্য সংলাপ হয়েছে রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে। তবে সেসব সফল হয়নি। এর প্রধান কারণ, রাশিয়ার শর্ত ছিল— ক্রিমিয়াসহ ইউক্রেনের যে চার প্রদেশ রাশিয়ার অধিকারে আছে, সেসবকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে কিয়েভের। অন্যদিকে ইউক্রেনের শর্ত ছিল— মস্কো যদি ইউক্রেনের চার প্রদেশের অধিকার ছেড়ে দেয়— কেবল তাহলেই সংলাপ হতে পারে।

এই নিয়ে মাসের পর মাস ধরে অচলাবস্থা চলেছে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে। আর এই সময়সীমায় দুই দেশের যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক।

এই যুদ্ধে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় মিত্র ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় ইউক্রেনকে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ‘রক্তস্নান’-এর অবসান চান এবং এই যুদ্ধ থামানোকে অগ্রাধিকার দেবেন।

তবে পুতিনের সাম্প্রতিক শান্তি সংলাপ প্রস্তাবের কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও দেয়নি কিয়েভ।

সূত্র : রয়টার্স

এফপি/এস এন  

Share this news on: