ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় আলোচনায় দুই মুসলিম নারী সেনার বীরত্ব

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি চর্চা হচ্ছে দুই দেশের ২ মুসলিম নারীর বীরত্বগাথা নিয়ে। তারা হলেন- ভারতের কর্নেল সুফিয়া কুরেশি এবং পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের নারী পাইলট আয়েশা ফারুক।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রীতিমতো কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দিয়ে ছিলেন ভারতের মুসলিম নারী সেনা কর্মকর্তা কর্নেল সুফিয়া কুরেশিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুর পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়ে।

সেই পরীক্ষায় তিনি ভালো ভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছেন তার রণকৌশলের ঝলক দেখিয়ে। একইসঙ্গে তিনি দেখিয়েছেন ভারতীয় মুসলিমরা দেশের জন্য কতোটা ডেডিকেটেড। গোটা ভারতবাসীর প্রসংশায় ভাসছেন সুফিয়া কুরেশি।

অন্যদিকে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানের প্রথম নারী পাইলট আয়েশা ফারুক ভারতের অত্যাধুনিক রাফাল ভূপাতিত করে নিজের জাত চিনিয়েছেন। পাকিস্তান সরকার তাকে জাতীয় বীর হিসেবে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছে। শুধু পাকিস্তানেই নন, গোটা বিশ্বে প্রসংশায় ভাসছেন পাইলট আয়েশা। প্রথম রাফাল ধ্বংসকারী নারী পাইলট হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবে আয়েশা ফারুকের নাম।

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি‌ সিগন্যাল কর্পস-ইউনিটে কর্মরতা। কুরেশি প্রথম ভারতীয় নারী অফিসার যিনি একটি আন্তর্জাতিক সামরিক মহড়ায় ভারতের নেতৃত্ব দেন। 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সময় তিনি সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনায় আসেন।

ভারতীয় সেনার সামরিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক্স অভিযান সহায়ক শাখা সিগন্যাল কর্পসের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা কর্নেল সুফিয়া। ৩৫ বছরের এই অফিসার ভারতের সেনাবাহিনীর একাধিক যুগান্তকারী সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত।

২০১৬ সালে তিনি প্রথম খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। ওই বছর ১৮টি দেশের সামনে ভারতের সামরিক মহড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোফিয়া। প্রথম মহিলা হিসাবে এই কৃতিত্ব তিনি অর্জন করেন।

সেসময়ে সোফিয়া ছিলেন লেফ্‌টেন্যান্ট কর্নেল। পুণের ওই সামরিক মহড়া ছিল ভারতে আয়োজিত সবচেয়ে বড় বিদেশি সামরিক মহড়া। ২ থেকে ৮ মার্চের মহড়ায় যোগ দিয়েছিল জাপান, চীন, আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো প্রভাবশালী দেশ। ভারত ছাড়া আর কোনো দেশের মহড়ার নেতৃত্বে নারী ছিলেন না।

৪০ সদস্যের ভারতীয় সেনাদলকে মহড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোফিয়া। মহড়ার লক্ষ্য ছিল শান্তিরক্ষার অভিযান। এই মহড়ায় নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতে তিনি নেতৃত্ব অর্জন করেছিলেন।

সম্মানজনক এই কাজের জন্য দেশের বেশ কয়েক জন শান্তিরক্ষী প্রশিক্ষকের মধ্যে থেকে সুফিয়াকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত কাজে সুফিয়ার অভিজ্ঞতাও অনেক। ২০০৬ সালে কঙ্গোয় রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা অভিযানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

সুফিয়ার পরিবারেও সেনাবাহিনীর ইতিহাস রয়েছে। তার দাদাও ভারতীয় সেনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেনার পরিবারেই তার বিয়ে হয়েছে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের নারী পাইলট আয়েশা ভারতের শক্তিশালী যুদ্ধবিমান রাফাল ভূপাতিত করে প্রসংশায় ভাসছে।

আয়েশা ফারুক পাকিস্তানে যুদ্ধবিমানের প্রথম নারী পাইলট। তার হেলমেটের ভেতর থেকে উঁকি দেয় জলপাই রঙের হিজাব।পাকিস্তানে গত এক দশকে বিমানবাহিনীতে মাত্র ১৯ জন নারী পাইলট হয়েছেন। তবে আয়েশা যুদ্ধবিমানের পাইলট।

উত্তর পাকিস্তানের মুশাফ বিমানঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ নেন মৃদুভাষী আয়েশা। তিনি তার পুরুষ সহকর্মীদের দিকে ইঙ্গিত করে বলতেন, এ ক্ষেত্রে আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। আমরা সবাই একই কাজ করি। নির্ভুলভাবে বোমবর্ষণ করি।

ছিপছিপে গড়নের আয়েশার বাড়ি পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুর শহরে। তার বাবা বেঁচে নেই। বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে চাইলে তার মায়ের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয়। কিন্তু দমে যাননি আয়েশা। গোটা বিশ্বের মানুষ তার বীরত্বপূর্ণ লড়াই দেখে মুগ্ধ।

তাই, পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে এই মুসলিম নারী সেনা কর্মকর্তার বীরত্বগাথা নিয়ে।

এফপি/এস এন

Share this news on: